মঞ্চে এম ভি রাও। নিজস্ব চিত্র
জেলাশাসকের গরহাজিরায় তিনি ক্ষুব্ধ। ভরা হাটেই সেই ক্ষোভের জানান দিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এম ভি রাও।
রবিবার খড়্গপুর মহকুমার মোহনপুর ব্লকে নবনির্মিত গ্রামীণ হাটে ১২টি স্টলের উদ্বোধনে এসেছিলেন এম ভি রাও। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলেরও। কিন্তু শেষমেশ জেলাশাসক না আসায় প্রকাশ্য মঞ্চেই তাঁকে নিশানা করে এম ভি রাও বলেন, ‘‘জেলাশাসকের আসা উচিত ছিল। উনি এলে ভাল লাগত আমারও। আমরা যদি কলকাতা থেকে আসতে পারি, তাহলে মেদিনীপুর থেকে জেলাশাসকের আসতে কী অসুবিধা বুঝতে পারি না।’’ রশ্মি জানান, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় মোহনপুরে যেতে পারেননি।
এ দিন মঞ্চে বেশ কিছুক্ষণ জেলাশাসকের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন এম ভি রাও। একটা সময় অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলাশাসক ছিলেন মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন জেলাশাসক ছিলাম তখন পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম একটি জেলা ছিল। এখন তিনটে আলাদা জেলা হয়েছে। তখনও সবাই বলত জেলাশাসকের নাকি প্রচুর ব্যস্ততা। কিসের ব্যস্ততা আমি বুঝি না।’’ সামনের সারির দর্শকদের দিকে দেখিয়ে তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনাদের কাছে না এলে আর কিসের জন্য কাজ! কী কাজ!’’
তাঁর কথায় ততক্ষণে হাততালি উঠেছে। এম ভি রাও না থেমেই বলতে থাকেন, ‘‘আপনাদের কাছে আসতে পারব না, আপনাদের সাথে কথা বলব না, আপনাদের সমস্যা বুঝব না, আপনাদের সমস্যার সমাধান করব না— তাহলে আমরা কিসের জন্য অফিসার, কিসের জন্য ডিএম, কিসের জন্য সচিব!’’ পরে তিনি আরও জুড়েছেন, ‘‘এগুলো খুবই সূক্ষ্ম বিষয়, কিন্তু বুঝতে হবে। সরকারি অফিসারদের এগুলো বুঝতে অসুবিধা হয়। সেটা কেন আমি জানি না। আমরা সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছি যখন আমরা ধরে নিই এগুলো আমাদের ‘পাওয়ার’। কিন্তু ‘পাওয়ার’ বলে কিছু নেই। আমরা কেউ জেলাশাসক নই, জেলা-সেবক।’’
এ দিন মিমুলের দুগ্ধ বিপণন কেন্দ্র, নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্বোধন ও দাঁতনের তুরকায় সমবায়ের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের উদ্বোধনেও হাজির ছিলেন এম ভি রাও। তবে কোনওটিতেই আসেননি জেলাশাসক। দাঁতনের অনুষ্ঠানেও অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মনে রাখতে হবে আমরা জেলা-সেবক।’’
বস্তুত, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব স্তরের একজন আধিকারিকের জেলাশাসককে নিশানা করে এমন মন্তব্য আমলা বৃত্তে কার্যত শোনাই যায় না। ফলে, বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। জেলাশাসক কেন গরহাজির থাকলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। জেলা প্রশাসনের একটি অংশ অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে, রশ্মি কমল সব রকম অনুষ্ঠানেই যান। এ দিনও তিনি নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন।
মোহনপুরে না যাওয়া নিয়ে রশ্মিও নিজেও ব্যস্ততার কথাই বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মেদিনীপুরে জব ফেয়ার চলছে। সেখানে ছিলাম। মাঝে পাথরায় বসন্ত উৎসবেও যেতে হয়েছে। তাই ওখানে যেতে পারিনি।’’