গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানিদের বিরুদ্ধে শেয়ার দর বৃদ্ধিতে প্রতারণার অভিযোগ তোলার পরে রাজ্যের তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরের ভবিষৎ কী হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন মহলে। কারণ, সেই বন্দর তৈরির বরাত পেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। প্রশ্নের মুখে এ বার প্রশাসনিক সূত্র জানাল, বন্দর তৈরির কাজ থেমে যায়নি। বরং তা চলছে স্বাভাবিক গতিতেই। শুধু তা-ই নয়, সূত্রের দাবি, প্রকল্পটির জন্য বেশিরভাগ জমি সরকারের খাস। অল্প যেটুকু প্রয়োজন, তা জোগাড়ের প্রক্রিয়াও শুরু হওয়ার পথে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পাশের হলদিয়া বন্দরে আদানিদের প্রভাব থাকায় জমি জোগাড়ে সমস্যায় পড়তে হবে না।
দরপত্র-প্রক্রিয়ায় তাজপুর বন্দর গড়ার জন্য আদানিরা নির্বাচিত হওয়ার পরে রাজ্য মন্ত্রিসভা তাদের আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) দেওয়ায় সম্মতি দিয়েছিল। গত ১২ অক্টোবর সরকারি বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠানে গোষ্ঠীর অন্যতম কর্ণধার করণ আদানির হাতে তা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনও পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন না থাকলেও, জানুয়ারিতে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে কার্যত অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। তবে সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করে, ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পেয়ে যাওয়ায় আদানিদের হাত থেকে সেই বন্দর নির্মাণের দায়িত্ব সরিয়ে নেওয়াও কার্যত অসম্ভব ছিল। এই পরিস্থিতিতে সংশয় কাটিয়ে সম্প্রতি প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, সেই কাজ করবে আদানিরাই।
প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “আদানিরা বলেননি, প্রকল্পের কাজ তাঁরা করবেন না। সাধারণত, এমন পরিকাঠামো তৈরিতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র থেকে সমীক্ষা, অনেকগুলি ধাপ পার করতে হয় মূল নির্মাণ শুরু করার আগে। সে সব স্বাভাবিক গতিতেই চলছে বলে আশা করা যায়।”
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক সময়ে স্থলভাগের কাছাকাছি সমুদ্র-এলাকায় ৭-৮ মিটার নাব্যতা থাকার কথা। তার একটু দূরত্বে নাব্যতা হওয়া উচিত ১২.১ মিটার। ফলে জোয়ারের কারণে অতিরিক্ত আরও ৩.১ মিটার গভীরতা পাওয়া সম্ভব। তবে বন্দরের জন্য স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের গভীরে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চ্যানেল তৈরি করার কথা। ওড়িশার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় বাজার ধরার সম্ভাবনা তুলনায় অনেক বেশি। ফলে ওড়িশার ধামড়া বন্দর আদানিদের হাতে থাকলেও, গুরুত্বের বিচারে তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে তাজপুর।
উল্লেখ্য, গ্রিনফিল্ড বা নতুন প্রযুক্তিতে বন্দরটি তৈরিতে ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াও পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ হওয়ার কথা আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।