তপতী গুহঠাকুরতাকে সংবর্ধনা মুখ্যমন্ত্রীর। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর ইউনেস্কো-স্বীকৃতি উৎসবে তিনি কি কাব্যে উপেক্ষিতা? কয়েক দিন ধরেই সমাজমাধ্যমে বার বার তাঁর নাম উঠে আসছিল। বৃহস্পতিবার রেড রোড মঞ্চে ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতার উপস্থিতি তাই আলাদা ভাবে নজর কেড়েছে। বিশ্ব আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় দুর্গাপুজোকে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাবটি তপতীর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল। এই অবদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন তাঁকে সংবর্ধনা জানান।
তবে দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি লাভের পিছনে কৃতিত্ব নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক এ দিন কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন তপতী। রেড রোডের অনুষ্ঠানের পরে তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর স্বীকৃতির কৃতিত্ব কারও একার নয়। তাজমহলের গৌরবের কৃতিত্ব কি কারও একার হতে পারে? গোটা একটি সমাজের স্বাক্ষর-সহ ইউনেস্কোর কাছে আমাদের প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। তাতে রাজ্য সরকারের আমলাদের বক্তব্যও ছিল।’’ কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে সঙ্গীত নাটক একাডেমির মাধ্যমে তপতীর তৈরি প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। তপতীর কয়েক জন ছাত্রও তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। দুর্গাপুজোর বিষয়টি ইউনেস্কোর কাছে তুলে ধরার একজন ‘নেপথ্য কর্মী’ হিসেবে সরকারি মঞ্চে সম্মাননা তাঁর কাছে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেন তপতী। রাজ্য সরকারকে তিনি ধন্যবাদও জানিয়েছেন। ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ় ইন কলকাতা’-র অধ্যাপক তপতী বলেন, ‘‘এর আগে ডিসেম্বরেই পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে আমরা এই স্বীকৃতির উদ্যাপন করি। ভাল লাগছে রাজ্য সরকারও সবাইকে নিয়ে এই অনুষ্ঠান করলেন।’’
এর আগে দুর্গাপুজোর মাত্রাতিরিক্ত রাজনীতিকরণ নিয়ে তপতী উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে দুর্গাপুজোয় বড় বড় নেতাদের ছবি বেশি দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবে বিগ বাজেট ছবি পুজো বেশি হচ্ছে। এর ফলে কোনও ছোট পুজো কোণঠাসা না হয়, সেটা দেখতে হবে।’’ এর পাশাপাশি তপতী এ দিন বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর শিল্পীদের গুরুত্ব কমা উচিত নয়। তবে কলকাতার পুজোয় সরকারি সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। মণিপুরের বৈষ্ণব সংকীর্তন বা লাদাখের বৌদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণের ঐতিহ্যের সঙ্গে দুর্গাপুজোর ফারাক রয়েছে।’’ ইউনেস্কো-স্বীকৃতির সময়ে কেন্দ্রের অকথিত ভূমিকা নিয়েও এ দিন তপতী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় আমলারা কলকাতার দুর্গাপুজো নয়, ভারতের দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি নিয়েই আগ্রহী ছিলেন। কলকাতার দুর্গাপুজোর শিল্পপ্রদর্শনীর কথা বলে ওঁদের বোঝাতে হয়, বৈশিষ্ট্যে কলকাতার দুর্গাপুজোই অনন্য।’’ ইউনেস্কো স্বীকৃতির ঘোষণার পরেও তিনি এ কথা আনন্দবাজারকে বলেছিলেন।