অসময়: শ্রীরামপুর আদালতের পথে সমীর। ফাইল ছবি
তিনি অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন একমাস আগে। এখনও তাঁর বিরুদ্ধে চলা মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। শ্রীরামপুরের সাংসদের বিরুদ্ধে কাটমানি সংক্রান্ত পোস্টার-কাণ্ডে অভিযুক্ত সেই পুলিশ অফিসার সমীর সরকার এ বার বহাল হলেন আরামবাগ থানায়!
গত শনিবার থেকে সাব-ইনস্পেক্টর পদেই আরামবাগ থানায় কাজ শুরু করেছেন সমীরবাবু। উঠে গিয়েছে তাঁর ‘সাসপেনশন’। কিন্তু এত দ্রুত একজন অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার কী ভাবে ভাল ‘পোস্টিং’ পেলেন, তা নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে পুলিশ এবং শাসকদলের অন্দরে। অভিযোগকারী তথা শ্রীরামপুরের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট অফিসার গ্রেফতার হওয়ার কারণেই সাসপেন্ড হয়েছিলেন। মামলা চলছে। তার উপর থেকে এই ভাবে সাসপেনশন তোলা যায় না। উনি তো প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করতে পারেন। পুলিশকর্তারা এ ক্ষেত্রে বিধিসম্মত কাজ করেননি।’’
এ নিয়ে চেষ্টা করেও সমীরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা শুধু বলেন, ‘‘আরামবাগ থানায় তাঁকে দেওয়া হয়েছে। একজন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসারের অধীনে তিনি কাজ করবেন।’’ কল্যাণবাবু সেই সময় গোটা ঘটনায় জেলায় দলের একাংশের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিতে পিছপা হননি। সমীরবাবু কাজে বহাল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘ওই অফিসারের মাথায় যাঁদের হাত ছিল, তাঁরা যে ফের সক্রিয় হয়েছেন, এটা পরিষ্কার। কিন্ত ওঁরা এটা বুঝছেন না, এক সাংসদকে ওই ভাবে হেনস্থা করে যিনি জেলে গেলেন, তিনি ফের স্বমহিমায় ফিরলেন। ভবিষ্যতে আবার দলের কারও ক্ষতি করতে পারেন তিনি।’’
ক্ষুব্ধ জেলা পুলিশের একাংশও। তাঁরা মনে করছেন, যে গুরুতর অভিযোগ সমীরবাবুর বিরুদ্ধে উঠেছিল, তাতে পুলিশের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ-ই ওই অফিসারকে বিভাগীয় ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ায় পুলিশকে নিয়ে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। এ ভাবে শাস্তি মকুব বিধিতেও আটকায়।
২৯ জুলাই শ্রীরামপুর স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে পোস্টার সাঁটানো হয়। একটি পুলিশের গাড়িতে চড়ে এসে কিছু লোক পোস্টার সাঁটায় বলে অভিযোগ ওঠে। ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ চুঁচুড়ার খাদিনা মোড় থেকে গাড়িটি আটক করে। গ্রেফতার করা হয় চালক অমর খামরুইকে। ধৃতকে জেরা করে ওই গাড়িরই আর এক আরোহী মহম্মদ মুস্তাফাকেও গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় দু’জনেই ২৯ জুলাই রাতে ওই গাড়িতে জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে (ডিআইবি) সেই সময় কর্মরত থাকা সাব-ইনস্পেক্টর সমীর সরকারের উপস্থিতির কথা জানায়। সমীরবাবু তার আগে পোলবা, জাঙ্গিপাড়া-সহ জেলার বিভিন্ন থানার ওসি ছিলেন। এরপরই গত ৬ অগস্ট পুলিশ ওই অফিসারকে গ্রেফতার করে। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হওয়ায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘সাসপেন্ড’ও করা হয়। যদিও সমীরবাবু আগাগোড়া তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। আট দিন হাজতবাসের পরে শ্রীরামপুর আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন পান সমীরবাবু।