এমবিবিএস হলে চাকরি

প্রশিক্ষণ-প্রস্তাব দাঁতের ডাক্তারের

দেশে ডাক্তারের প্রচণ্ড আকাল। কিন্তু যথেষ্ট এমবিবিএস ডাক্তার নেই। প্রতি বছর বিডিএস পাশ করে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোচ্ছেন দাঁতের ডাক্তার। অথচ যথেষ্ট চাকরি নেই।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১৫:০০
Share:

দেশে ডাক্তারের প্রচণ্ড আকাল। কিন্তু যথেষ্ট এমবিবিএস ডাক্তার নেই।

Advertisement

প্রতি বছর বিডিএস পাশ করে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোচ্ছেন দাঁতের ডাক্তার। অথচ যথেষ্ট চাকরি নেই।

এই অবস্থায় চাকরির জন্যই এমবিবিএস হয়ে উঠতে চাইছেন বিডিএস-দের একটি বড় অংশ।

Advertisement

ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা ডিসিআই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী দাঁতের রোগীর তুলনায় বিডিএস পাশ করা দাঁতের ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। ফলে তাঁদের অনেকেরই কাজ নেই। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে বিডিএস-দের এমবিবিএস করে তুলতে পারলে দাঁতের ডাক্তারদের চাকরি হয়। ডাক্তারের অভাবও মেটে কিছুটা। বিডিএস-দের একাংশকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এমবিবিএস চিকিৎসক করে তোলার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, দেশের কমিউনিটি হেলথ সেন্টারগুলিতে প্রায় ৮৫ শতাংশ চিকিৎসক-পদ খালি। সার্জনের ঘাটতি প্রায় ৮০ শতাংশ। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের ঘাটতি ৭৬ শতাংশ। দাঁতের ডাক্তারদের একাংশকে দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। সম্প্রতি এই ব্যাপারে প্রশিক্ষণের লিখিত প্রস্তাব এসেছে ডিসিআই-এর কাছ থেকে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআই-এর কর্তাদের সঙ্গে বসে দাঁতের ডাক্তারদের জন্য একটি ব্রিজ কোর্স তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। ডিসিআই-এর সচিব সব্যসাচী সাহা জানাচ্ছেন, যে-সব দাঁতের ডাক্তার এমবিবিএস পড়তে চাইবেন, তাঁদের তিন বছরের একটা এমবিবিএস ব্রিজ কোর্স পড়তে হবে। যাঁরা এই সুযোগ পাবেন, পাশ করার পরে তাঁদের বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রামে পাঁচ বছর পরিষেবা দিতে হবে বলে ডিসিআই-এর প্রস্তাবে শর্ত জানানো হয়েছে।

ডিসিআই-এর যুক্তি, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে একসঙ্গে অন্তত তিনটি উদ্দেশ্য পূরণ হবে। l দেশে এমবিবিএস ডাক্তারে আকাল মিটবে অনেকটাই। l হাতুড়েদের রমরমা কমবে। l বিডিএস পাশ করেও যাঁরা বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের কর্মসংস্থান হবে। প্রশিক্ষিত ওই ডাক্তারেরা জরুরি পরিষেবা দিতে পারবেন। শুধু সর্দি-কাশি-জ্বর, পেট খারাপের চিকিৎসা নয়, প্রসবও করাতে পারবেন। আবার দাঁতের চিকিৎসাও করতে পারবেন তাঁরা।

‘‘ওঁরা বিডিএস পাশ করে আসায় অনেক কিছুই শিখেছেন। তাই তাঁদের আরও একটু শিখিয়ে-পড়িয়ে নিলেই কাজ চলে যাবে,’’ বলছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব অরুণ সিঙ্ঘল।

এমসিআই অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (আইএমএ)-ও। এমসিআই-এর সভানেত্রী জয়শ্রী বেন মেহতা বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগেও এক বার এই প্রস্তাব দিয়েছিল ডিসিআই। তখন আমরা খারিজ করে দিয়েছিলাম। এ বার ফের আলোচনা করে দেখতে হবে, কী করা যায়।’’

পশ্চিমবঙ্গের দাঁতের ডাক্তারদের একটা বড় অংশের দাবি, এ রাজ্যে দাঁতের চিকিৎসকের সংখ্যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম। ফলে এখান থেকে খুব বেশি লোক এমবিবিএস হতে আগ্রহী হবেন না বলেই মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরলের মতো রাজ্যে দাঁতের ডাক্তার প্রচুর। কিন্তু কাজ নেই অনেকের। ডেন্টাল কাউন্সিল প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা-প্রস্তাব পাঠিয়েছে মূলত তাঁদের কথা ভেবেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement