স্কুল খোলার শুরুর দিনেই প্রায় ১০০ শতাংশ পড়ুয়া হাজির উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ে
প্রথম দিনেই সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়।
স্কুল খোলার শুরুর দিনেই প্রায় ১০০ শতাংশ পড়ুয়া হাজির উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ৬৪৫ জন। মঙ্গলবার স্কুলে এসেছিল ৬৪০ জন। তবে শুরু থেকেই যাতে সকলে ক্লাসমুখো হয়, সে জন্য বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
অনলাইন ক্লাস করত ৫০-৫৫ শতাংশ পড়ুয়া। অনেকে প্রত্যন্ত এলাকার। অনেকের অভিভাবক দিনমজুরি বা ছোটখাট কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ছেলেমেয়েদের মোবাইল কিনে দেওয়া বা নেটের খরচ জোগানো সম্ভব ছিল না অনেকেরই। প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ সিদ্ধান্ত নেন, অনলাইন ক্লাস যারা করছে না, তাদের এলাকায় গিয়ে পড়ানো হবে। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন তিনি। গ্রামের ভিতরে ছাত্রছাত্রীদের জড়ো করে সেখানেই নিয়মিত ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁকে সহযোগিতা করেন। ফলে স্কুলে না এলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে পড়ুয়াদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ২৫ জন পড়ুয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যাদের অনটনের কারণে পড়া বন্ধ হতে বসেছিল। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের বোঝান প্রধান শিক্ষক। ব্যক্তিগত ভাবে ওই পড়ুয়াদের পরিবারের পাঁচ মাসের খাদ্যসামগ্রীর দায়িত্বও নেন।
কয়েকজন পড়ুয়া কাজে ঢুকে গিয়েছিল। তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে স্কুলে ফিরিয়ে আনেন মনোজ। একাদশ শ্রেণির প্রলয় মণ্ডল, সুবীর মজুমদার ও দ্বাদশ শ্রেণির সৌভিক মজুমদারেরা সেলাই কারখানায় কাজ নিয়েছিল। প্রলয় এ দিন স্কুলে আসে। তার কথায়, ‘‘বাবা গ্যারাজে কাজ করেন। লকডাউনে আমিও কাজ শুরু করি। প্রধান শিক্ষক জানতে পেরে বাড়িতে আসেন। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে দেন। খাবার-দাবার, বইপত্রও দেন। এখন পড়াশোনা করতে অসুবিধা হচ্ছে না।’’
মনোজ বলেন, ‘‘যে পাঁচ জন এ দিন স্কুলে আসেনি, তাদেরও আমরা স্কুলে আনব। সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে আসতে বলেছিলাম। আজ সকলকে দেখে বড় আনন্দ হচ্ছে।’’