অমিত আক্রমণ মোকাবিলায় ভাইপোই অস্ত্র তৃণমূল নেত্রীর

এক প্রৌঢ়কে চ্যালেঞ্জ জানালেন এক যুবা! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিতে কালি লাগানোর চেষ্টা করলে অমিত শাহরা পশ্চিমবঙ্গে পা রাখার জমি খুঁজে পাবেন না। বিজেপি সভাপতির হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন তৃণমূল নেত্রীর ভাইপো এবং ‘যুবা’র সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২
Share:

বৌবাজারের সভায় অভিষেক। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

এক প্রৌঢ়কে চ্যালেঞ্জ জানালেন এক যুবা!

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিতে কালি লাগানোর চেষ্টা করলে অমিত শাহরা পশ্চিমবঙ্গে পা রাখার জমি খুঁজে পাবেন না। বিজেপি সভাপতির হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন তৃণমূল নেত্রীর ভাইপো এবং ‘যুবা’র সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, “কেউ যদি দিল্লি থেকে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে চায়, তাকে আবার দিল্লি ফিরে যেতে হবে!” রবিবার বৌবাজারের লেবুতলায় দাঁড়িয়ে অমিত হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সোমবার তার কাছেই তাঁদের সংগঠনের মঞ্চ থেকে পাল্টা তোপ দাগলেন অভিষেক।

অমিতের মোকাবিলায় দলের পোড়-খাওয়া নেতাদের পিছনে রেখে ভাইপো অভিষেককে এগিয়ে দিয়েছেন মমতা। বিজেপি বা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কেউ কোনও মন্তব্য করলে তার মোকাবিলা করার ভার তিনি সাধারণ ভাবে মুকুল রায়ের উপরে দেন। এমনকী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও কখনও কখনও সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এ বার তাঁদের কাউকে না বেছে অভিষেককেই কেন এগিয়ে দিলেন মমতা, তা নিয়ে দলের অন্দরে চর্চাও শুরু হয়েছে। দলের একাংশের মতে, সারদা-রেল যোগাযোগ নিয়ে মুকুলের মন্তব্য এবং তার জেরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মুকুলের উপরে দলনেত্রীর আস্থাহীনতাই এই সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণ। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে মমতা বুঝিয়েছেন, দলের মধ্যে কাকে তিনি এখন ‘বিশ্বাসযোগ্য’ মনে করেন।

Advertisement

আবার অন্য অংশের ব্যাখ্যা, অমিতের মোকাবিলায় তরুণ অভিষেকই যথেষ্ট এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন মমতা। তা ছাড়া, পূর্ব ঘোষণা মতো এ দিন বসিরহাটে দু’টি নির্বাচনী সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন মুকুলবাবু। সেই কারণেই তিনি বৌবাজারের সভায় যেতে পারেননি। তবে তৃণমূল শিবিরের অন্দরের খবর, রেল-সারদা বিতর্কে মুকুল যে ভাবে নিজেকে আলাদা করতে চেয়েছেন তাতে দলনেত্রী তো চটেছেনই, তার সঙ্গে সঙ্গে মুকুল-অভিষেক শিবিরের বিভাজন আরও প্রকট হয়েছে।

চৌরঙ্গির উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে এ দিন তৃণমূল ‘যুবা’ সভার আয়োজন করেছিল। কিন্তু অভিষেক বক্তৃতার শুরুতে স্পষ্ট বলে দেন, “আমি আজ ভোট চাইতে আসিনি। এসেছি কাল এখানে যাঁরা সভা করেছেন, তাঁদের কুৎসার জবাব দিতে!’’ মমতা যেমন লোকসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে ‘হরিদাস পাল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন, এ দিন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদেরও একই বিশেষণে ভূষিত করেন ভাইপো। তাঁর মতোই এ দিন তৃণমূলের প্রাক্তন ছাত্র নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, অশোক দেব থেকে শুরু করে বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়, সুব্রত বক্সী, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শশী পাঁজা প্রমুখ বিজেপির সমালোচনায় সরব ছিলেন। সৌগতবাবু বলেন, “দাঙ্গার খুঁটিদের কথা বাংলার মানুষ শুনবে বলে মনে হয় না!”

বৌবাজারের সভায় তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের উপস্থিতি থাকলেও মূল আকর্ষণ যে অভিষেক, তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ। তিনি বলেন, “কোলে পিঠে করে অভিষেককে বড় করেছি। আজ সেই অভিষেকই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রানার হয়ে তাঁর বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছে দেবেন।” দায়িত্ব পালনে নেমে অভিষেক বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে দুষেছেন, রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের নিরিখে মোদীর সরকারের খতিয়ান বিশ্লেষণ করেছেন, তেমনই সারদা-কাণ্ডে মমতা-সরকার নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমকে তাঁর হুঁশিয়ারি, “এরা কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন তুলেছে (অর্থলগ্নি সংস্থার থেকে)। যারা প্রতারিত হয়েছে, এ বার তারা ঘেরাও করে টাকা ফেরত চাইবে!” তাঁর আরও তির্যক মন্তব্য, “সংবাদমাধ্যমের পেটে এত জ্বালা কেন? কারণ, ৩০ টাকার হাওয়াই চপ্পল পরে, ৩০০ টাকার শাড়ি পরে, টালির চালের ঘরে থেকে গরিবের মেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছে। এটা ওরা মেনে নিতে পারছে না!”

এ দিকে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান এবং অমিতের কলকাতা সফর নিয়ে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, জনার্দন দ্বিবেদী এবং সি পি জোশীর কাছে এ দিনই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তাঁর মন্তব্য, “অতীতে বিজেপি-কে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছে সিপিএম। আর তৃণমূল তাদের গলায় মালা পরিয়েছে! এ জন্য ওদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement