অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
মামলার এজলাস বদল ও তার জেরে শুরু হওয়া বিতর্কের মধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে সুর চড়ালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্দিষ্ট ওই মামলাটির এজলাস বদল নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক মহলে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শুক্রবার মামলার নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তিনি যে-কাজ ৬ মাসে করছিলেন, তাতে ৬০ বছর লেগে গেলেও তাঁর আর কিছু বলার নেই। শনিবার সাংবাদিকদের সেই প্রসঙ্গেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আমি বলব এমন কাউকে (বিচারপতি) দিন, যিনি তিন মাসে শেষ করবেন। দু’মাসে শেষ করবেন। বিচার চাই।’’
বিচার নিয়ে অভিষেকের এই দাবিকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। কারও কারও মতে, এ বার উল্টো চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছেন অভিষেক। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মানুষ জানেন কী হয়েছে। মানুষকে মূর্খ বা রাজনৈতিক ভাবে অচেতন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাদের কাছে এই ধরনের কথার আর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি এখন স্বাভাবিক ন্যায় বিচারের পর্যায়ে পড়ে। যা তথ্য-প্রমাণ আছে, বাগ কমিটির সুপারিশ আছে, তাতে দেরি হওয়ার কথা নয়। যাঁরা এই দাবি করছেন, তাঁরাই তো আদালতে গিয়ে বার বার তা আটকে দিতে চেয়েছেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘(বিচারপতি) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে তৃণমূলের নেতারা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানা রকমের ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন। তাঁর এই লড়াইয়ে বাংলার মানুষ শক্তি পেয়েছেন। তিনি শুধু বিচারক (বিচারপতি) নন, বাংলার মানুষের প্রাণপুরুষ।’’
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের যে মামলার সূত্রে অভিষেককে প্রশ্ন করা যেতে পারে বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, সেই মামলাটি থেকেই তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার রাতে সেই প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আমি ইস্তফা দেব না। আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই।’’ আরও জানিয়েছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই। এ দিন এই প্রসঙ্গে দলের জনসংযোগ যাত্রা কর্মসূচির ফাঁকে প্রশ্ন করা হয় অভিষেককে। তিনি সংক্ষিপ্ত জবাব দেন, ‘‘সবাইকেই লড়াইয়ের মধ্যে থাকা উচিত।’’
নিয়োগ মামলা ও তা নিয়ে শুরু হওয়া তরজায় বিজেপিকে অবশ্য তীব্র আক্রমণই করেছেন অভিষেক। রাজ্যে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে তাদের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘এ সব করে লাভ নেই। যত করবে, আমাদের প্রতিবাদের ভাষা তত তীব্র হবে। রাস্তায় আন্দোলন তত তীব্রতর হবে। সংগ্রামের রথ তত জোরে ছুটবে।’’ তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি-সহ বিরোধীদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করে অভিষেকের আরও বক্তব্য, ‘‘অনেক তো চেষ্টা করেছে আমাকে ধমকানো, চমকানোর। ইডি, সিবিআই— এ সব করে লাভ নেই। আমি অন্য ধাতুতে তৈরি।’’ এর সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোরও টেনে এনেছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘বিজেপি আমাদের টাকা আটকে দিয়েছে। মানুষ জাগ্রত হলে সেই টাকা আদায় করে আনতে এক সেকেন্ড লাগবে। দিদির সরকার টাকা দিচ্ছে আর মোদীর সরকার নিয়ে নিচ্ছে।’’
সর্বোচ্চ আদালতে যে-আর্জির ভিত্তিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে মামলাটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে অভিষেকের তরফে আইনজীবী ছিলেন তৃণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভায় নির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি। তা নিয়ে অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলেই এ দিন পথে নেমেছিল রাজ্য কংগ্রেস। মিছিলে অংশ নেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায়, শাহিনা জাভেদ, শাদাব খান, মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুমন পাল প্রমুখ। তাঁদের দাবি, কংগ্রেস বিচারপতির পাশেই আছে।