কোতুলপুরে অভিষেকের কর্মসূচি। ছবি: সমাজমাধ্যম
নিয়োগ মামলার সূত্রে সিবিআই তলব নিয়ে এ বার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বাঁকুড়ার বিষ্ণপুরে দলীয় সভায় অভিষেক বলেন, ‘‘মানুষের দরবারে আসুন। মানুষ তৃণমূলকে চাইলে মোদী সিবিআই, ইডি লাগিয়েও আমার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবেন না।’’ বিজেপি অবশ্য অভিষেকের এই মন্তব্যকে হতাশা ও আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছে।
গরু ও কয়লা পাচার নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাবে অভিষেক আঙুল তুলেছিলেন মোদী-মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকে। এ বার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে দলের বুথ সভাপতিদের সভায় অভিষেক এ দিন বলেন, ‘‘আমার বয়স তো ৩৬। প্রধানমন্ত্রী ৭২। আমার দ্বিগুণ বয়সে আপনি লড়াই করতে চাইলে আসুন না। মানুষ তৃণমূলকে চাইলে কিছু করতে পারবেন না।’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হতাশা এবং আতঙ্ক থেকেই এই সব অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছেন অভিষেক। বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় কাজ করছে। এক জন সাংসদ যে এমন কথা বলতে মোদীকে পারেন, তা শুনে বিষ্ণুপুরের পোড়া মাটির ঘোড়াও আজ হেসে উঠেছে।’’
সিবিআইয়ের তলব পেয়ে গত শুক্রবার বাঁকুড়ার জনসংযোগ কর্মসূচি স্থগিত রেখে কলকাতায় ফিরেছিলেন অভিষেক। এ দিন সেখানেই জনসংযোগ শুরু করেন। বিকেলে ‘রোড শো’ সেরে রাতে দলের বুথ সভাপতি ও সংগঠকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে বলেন, ‘‘যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলাম, সিবিআই পারলে আমাকে গ্রেফতার করুক। বুক চিতিয়ে গেছি, বুক ফুলিয়ে বেরিয়ে এসেছি।’’ তাঁর তলব ঘিরে বিজেপি-সহ যে বিরোধীরা কটাক্ষ করে চলেছেন, তাঁদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘‘সিবিআই, ইডি লাগিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা তিন গুণ বেড়ে গেছে।’’
গত লোকসভা নির্বাচনে হাতছাড়া বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে এই জনসংযোগ তৃণমূলের কাছে সাংগঠনিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সে কথা স্বীকার করেই অভিষেক বলেন, ‘‘এই রকম দুর্বল জায়গায়ও মানুষ আস্থা দেখিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁদের জন্য এমন পঞ্চায়েত তৈরি করতে হবে, যাতে কাজ হয়।’’ পঞ্চায়েত নিয়ে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ওঠে, সে দিকে ইঙ্গিত করে অভিষেক এ দিন বলেন, ‘‘মানুষ গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রধানের বাড়ির দরজায় বসে থাকবেন কেন? এ বার প্রতি তিন মাস অন্তর কাজ পর্যালোচনা করে প্রধানদের মেয়াদ বাড়ানো হবে।’’ যিনি কাজ করবেন না, তিনি পদে থাকবেন না বলেও ঘোষণা করেন অভিষেক। তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েতের দায়িত্ব পাওয়া মানে করে খাওয়ার লাইসেন্স নয়। মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে।’’
প্রার্থীপদ নিয়ে দলের অন্দরে কোন্দল যে কোন পর্যায়ে। জনসংযোগ কর্মসূচিতে একাধিক জেলায় তা টের পেয়েছেন অভিষেক। এ দিনের সভায় তিনি বলেন, ‘‘দল যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁকেই জেতাতে হবে। কেউ নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাঁর জন্য দলের দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ।’’