জলপাইগুড়িতে দলের ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচির ফাঁকেই জনৈক ব্যবসায়ীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
এক সময় মহারানি ইন্দিরা দেবী মুম্বই বা কলকাতায় থাকলে বিমানে তাঁর জন্য বোরোলি পাঠানো হত। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উত্তরবঙ্গে এলে তাঁর মেনুতেও থাকত রকমারি বোরোলির পদ। তিস্তা-তোর্সার রুপোলি সম্পদ সেই বোরোলিই উঠল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাতে। শনিবার জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকে দলের ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচির ফাঁকেই মধ্যাহ্নভোজ সারেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তার মেনুতে ছিল— ভাত, ডাল, নিরামিষ সব্জি, ভাজা, পটল পোস্ত, বোরোলি ও আর মাছ। শেষ পাতে টক দই আর মিষ্টি।
গত বছর জুলাই মাসে ধূপগুড়িতে জনসভায় যাওয়ার সময় কোনও আগাম বার্তা ছাড়াই দোমহানির পুরনো বাজারের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েছিলেন অভিষেক। ঘুরে দেখেছিলেন বাজার চত্বর। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে হাটের সংস্কারের দাবি জানান। সেই দাবি মেনে বাজারে দাঁড়িয়েই জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে হাট সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। সম্প্রতিই সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। শনিবার সেই হাট পরিদর্শনেই যান অভিষেক। তার পর মধ্যাহ্নভোজ সারতে সোজা চলে যান রাহুত পরিবারের বাড়িতে।
টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর। বৃষ্টির জল আটকাতে সেটি পলিথিন দিয়ে চাপা দেওয়া। ঘরের বারান্দাও দীর্ঘ দিন মেরামত না হওয়ায় প্রায় ভেঙে যেতে বসেছে। দোমহানি বাজার লাগোয়া এই ভগ্নপ্রায় বাড়িতেই অভিষেক দুপুরে খাওয়াদাওয়া করতে চান, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছ থেকে এ কথা জানার পর থেকেই মহাফাঁপরে পড়েছিলেন গৃহকর্তা সঞ্জীব রাহুত! তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে তো ভেবেই পাচ্ছিলাম না, কী ভাবে এ সবের আয়োজন করব! অভিষেককে কী ভাবে আপ্যায়ন করা উচিত, সত্যিই বুঝতেই পারছিলাম না।’’
মধ্যবিত্ত পরিবার সঞ্জীবের। পেশায় ছোট ব্যবসায়ী। ভাই রাজুও সঙ্গেই থাকেন। দু’জনেই বিবাহিত। দু’জনের স্ত্রী জয়া এবং রুমা হেঁশেল সামলান। কী রান্না করে অভিষেককে খাওয়াবেন, সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছিল তাঁদের। জয়া বলেন, ‘‘পরে ভাবলাম, গরমের সময়ে হালকা খাবার খাওয়ানোই ভাল! সেই মতো ভাত, ডাল, নিরামিষ সব্জি, ভাজা, পটল পোস্ত, বোরোলি ও আর মাছের ঝোল বানালাম। এই বাড়ির কচিকাঁচাদের সঙ্গে বসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় খাওয়াদাওয়া করলেন, এই ঘটনা স্বপ্নের মতো!’’