কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা অভিষেকের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দিদি দিচ্ছেন, মোদী নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আর রাজ্য সরকারের তুলনা করতে গিয়ে সোমবার এমনই শব্দবন্ধ ব্যবহার করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদ হিসাবে নিজের এবং রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করেন তিনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজার দর, জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। আধার আর প্যানের লিঙ্ক করার নামে হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। আমাদের সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডারে ১০০০ টাকা দিচ্ছে। এক দিকে, দিদি দিচ্ছেন, আর অন্য দিকে, মোদী নিচ্ছেন।’’
সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার চড়িয়ালে একটি সেতুর একটি লেনের উদ্বোধন করেন অভিষেক। নিজের সংসদ এলাকায় সেই মঞ্চ থেকেই কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি। রাজ্য সরকারের তরফে ‘১০০ দিনের টাকা’ বাবদ সাধারণের প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার ঘোষণাকে ‘যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত’ বলেছেন অভিষেক। তার পরই দেশ জুড়ে মূল্যবৃদ্ধি, আধার লিঙ্কের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তৃণমূল সাংসদ।
কেন্দ্র সরকার যে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে, সেই কথা বলে অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এই ব্যাপারে তিন বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আপনারা দেখেছেন আমাদের মহিলা সাংসদদের কী ভাবে দিল্লিতে কৃষিভবন থেকে টেনে হিঁচড়ে, চুলের মুঠি ধরে বার করে দিয়েছিল।’’ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ একই সঙ্গে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘বাংলায় হেরে গেছে বলে, বাংলার টাকা আটকে রাখা হয়েছে।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন রেড রোডের ধর্নামঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার কথা। অভিষেক বলেন, ‘‘মানুষের উপার্জিত টাকা আটকে রেখেছে মোদী সরকার। তিনি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে তাঁদের টাকা দেবেন।’’
এর পরই পরিসংখ্যান দিয়ে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কথা দিয়ে কথা রেখেছি। ২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে জিতে এসে কথা দিয়েছিলাম, আমার সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী যেখানে রাস্তা জল কলের প্রয়োজন আমি অগ্রাধিকার দিয়ে দেখব। সেই কথা রেখেছি। কথা মতো ডায়মন্ড হারবারে বার্ধক্য ভাতা চালু হয়েছে। ৭০ হাজার প্রবীণ মানুষ এতে উপকৃত হচ্ছেন। রাজ্য সরকারও বার্ধক্য ভাতা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
গত ১০ বছরে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে কী ভাবে কাজ হয়েছে তা শোনা যায় অভিষেকের মুখে। তাঁর কথায়, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে ১০ বছরে পাঁচ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে।’’ তার পরই তিনি হিসাব কষে দেখিয়ে দেন বছর, মাস, দিন, মিনিট, সেকেন্ডের হিসাবে কত টাকার কাজ হয়েছে। অভিষেক বলেন, ‘‘এক বছরে ৫৫৮ কোটি টাকার কাজ হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। এক মাসে ৪৬ কোটি টাকা। এক দিনে এক কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। প্রতি মিনিটে ১০ হাজার ৮০০ টাকার কাজ হয়েছে। আর এক সেকেন্ডে কাজ হয়েছে ১৮০ টাকার।’’ তার পরই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কোনও মন্ত্রী বা বিজেপির ছোট-বড় কোনও নেতা যদি নিজের লোকসভা কেন্দ্রে এত কাজের প্রমাণ দিতে পারেন, তবে আমি কথা দিচ্ছি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখব না।’’
পাশাপাশি সোমবার অভিষেক ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির পশ্চিমবঙ্গে হানা দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কথায় কথায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি পাঠাচ্ছে। রেইড করছে। এখানে রোজ ১০ বার করে রেইড করুন, অসুবিধা নেই। কিন্তু মানুষের টাকা যদি আটকে রাখেন, তবে আপনারা যে ভাষা বোঝেন, মানুষ আপনাদের সেই ভাষাতেই জবাব দেবে।’’