মঙ্গলবার ধুপগুড়ির সভায় বক্তব্য রাখলেন অভিষেক।
একুশের লড়াইয়ের হিসাব অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের থেকে ভোট-বিচারে অনেকটাই এগিয়ে বিজেপি। সেই দায় নিজের দলের কাঁধেই চাপালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ধূপগুড়ি ফুটবল মাঠে আগামী ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতি সভা করতে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, মানুষ এখনও তৃণমূলকে চায়। কিন্তু তাঁদের কাছে পৌঁছতে অক্ষম স্থানীয় নেতারা। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ শব্দবন্ধেও তুমুল আপত্তি তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গ নয়, দক্ষিণবঙ্গ নয়, একটাই নাম, পশ্চিমবঙ্গ।’’
নাম না করে বিজেপিকে কটাক্ষ করেই মঙ্গলবার নিজের বক্তৃতা শুরু করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল ভোটের পাখি নয়। আমি আগেই বলেছিলাম, বহিরাগতরা আসে, যায়। ভোটের পর দেড় বছর কেটে গিয়েছে। যাঁরা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করছিলেন, তাঁরা আর নেই। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তৃণমূলকে আনন্দে পাবেন না। যখন দরকার হবে, আমরা পৌঁছে যাব। সেই কথাই সত্যি হল।’’
মঙ্গলবারের বক্তৃতায় অভিষেকের কণ্ঠে বার বারই শোনা গিয়েছে নিজের দলের দায়ের কথা। উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে পৌঁছতে না পারার দায়ও যে স্থানীয় নেতৃত্বের, সে কথাও শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। ধূপগুড়ির সভায় আসার সময় তিনি ‘রেইকি’ করেই এ সব বলছেন বলেও মন্তব্য করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘আজ যখন আসব, ঠিক করি নেমে পড়ব রাস্তায়। নিজের চোখে দেখব আলিপুরদুয়ারের মানুষ কেন আমাদের বঞ্চিত করেছেন। দোমোহনি হাটে নেমেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমি নামলেই সবাই রে রে করে আসবেন। বলবেন, তোমাদের পঞ্চায়েত কাজ করেনি। জেলা পরিষদ কাজ করেনি। কিন্তু না। অনেকে এলেন। সমস্যার কথাও বললেন।’’ এখানেই থামেননি অভিষেক। বলেন, ‘‘আধ ঘণ্টা ধরে হাট ঘুরলাম। আজও জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মানুষের মনে আমাদের জন্য ভালবাসা রয়েছে। আজও মানুষ দরজা খুলে বসে আছেন। আমাদের নেতারা পৌঁছতে পারছেন না। সেখানে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ছেন বিজেপি নেতারা।’’
এর পর থেকে তিনি নিয়মিত জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে যে আসবেন, সে বার্তাও দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আবার দু’মাসের মধ্যে আসছি। এত বার আসব, যে আপনারাই বলবেন, তুমি যাও। আমরা দেখে নেব।’’ এর পরেই দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বয়সে মানুষের কাছে যেতে পারলে, তৃণমূলের কোনও নেতা এত কেউকেটা হননি, যে যেতে পারবেন না! চার চাকায় নয়, বাইকে ঘুরুন, সাইকেলে ঘুরুন।’’
শুধু নিজের দলের নেতাদের শুধরানোর বার্তা দেননি তিনি, অভিষেক রীতিমতো চ্যালেঞ্জও ছুড়েছেন বিজেপিকে। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা উত্তরবঙ্গ উত্তরবঙ্গ বলে বাংলাকে ভাগ করতে চায়, চ্যালেঞ্জ করছি, মমতা যত দিন থাকবেন, রাজ্য ভাগ করার সাহস পাবেন না।’’ সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমার উত্তরবঙ্গ শুনতে ভাল লাগে না। আমি যখন ঝাড়গ্রাম, ডায়মন্ড হারবারে মিটিং করি, আপনারা, মিডিয়ার লোকজন বলেন না দক্ষিণবঙ্গ।’’ অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে এলে কেন লেখা হয় উত্তরবঙ্গ?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি ছ’মাস পর যখন আসব, কথা দিচ্ছি সবাই বলবে ধূপগুড়িতে এসেছি। ফালাকাটায় এসেছি। উত্তরবঙ্গ বলে কোনও শব্দ নেই। আমাদের, তৃণমূলের অভিধানে ওই শব্দ নেই। একটাই শব্দ পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাকে রক্ষা করব, ভাগ হতে দেব না। এই মঞ্চ থেকে কথা দিয়ে গেলাম। বিজেপি নেতারা, যদি বাপের বেটা হও, করে দেখাও বাংলা ভাগ।’’