(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত সূত্রে গত সোম থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কলকাতার একাধিক জায়গায় ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। তার মধ্যে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র অফিস, তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের ফ্ল্যাটও ছিল। বুধবার দুপুরে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সেই বিজ্ঞপ্তিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে। তা নিয়েই টুইট, পাল্টা টুইটে তরজায় জড়ালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। সেই তরজা চলতে চলতেই ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছোঁয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ চলে আসে। সফল অবতরণের পর টুইট-যুদ্ধ কিছুক্ষণের জন্য থামে। দুই নেতাই অভিনন্দন জানান ইসরোকে। রাত ৮টার পর ফের টুইট করে অভিষেককে নিশানা করেন শুভেন্দু। তারপর তা চলছেই। বিকালে যা শুরু হয়েছিল তা রাত ১০টার পরেও জারি রয়েছে।
ইডির প্রেস বিজ্ঞপ্তি। —ছবি সংগৃহীত।
ইডির বুধবারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রথমে টুইট করেন শুভেন্দু। সেখানে বিরোধী দলনেতা লেখেন, ‘‘আমি এক জনের স্মৃতিকে একটু তাজা করে দিতে চাই, যিনি বার বার বলেছেন, তদন্তকারী সংস্থা যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দিতে পারে তা হলে তিনি স্বেচ্ছায় ফাঁসির মঞ্চের দিকে হেঁটে যাবেন। বাংলার মানুষ তাঁর এই সমস্ত কথাকে ধর্তব্যের মধ্যে ধরেন না। আপনার ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার দরকার নেই। তার চেয়ে বরং তদন্তকারী সংস্থার অফিসে যান। আশা করি আপনার বিবেককে জাগ্রত করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।’’
শুভেন্দু এই টুইটটি করেন বুধবার বিকাল ৪টে ৯ মিনিটে। ঠিক তার ১২ মিনিট পর পাল্টা টুইট করেন অভিষেক। নারদ স্ট্রিং অপারেশনে শুভেন্দুর ছবি টুইট করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক লেখেন, ‘‘আশা করি আপনার বিবেক জাগ্রত করার জন্য এই ছবিটি যথেষ্ট। আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারি, আপনি কবে তদন্ত সংস্থার দফতরে যাবেন?’’
বিকাল ৪টে ৫৬ মিনিটে ফের একটি টুইট করেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে তিনি আবার নারদ স্টিং অপারেশনে সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম ও কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ছবি দিয়ে অভিষেকের উদ্দেশে লেখেন, ‘‘এ ব্যাপারে আপনি কেন আপনার কাকা ফিরহাদ হাকিম, দাদু সৌগত রায় আর পিসি কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে জিজ্ঞাসা করছেন না?’’ সেই সঙ্গে শুভেন্দু এ-ও লেখেন, অভিষেক তাঁর যে ছবি টুইট করেছেন তাতে কেবল তাঁকে খবরের কাগজ হাতে দেখা যাচ্ছে।
এর পর ফের আক্রমণ শানান অভিষেক। বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে নারদ-কাণ্ডে শুভেন্দুর একটি ভিডিয়ো টুইট করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। সেই টুইটে ইডি এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক্স (টুইটার) হ্যান্ডলকে উল্লেখ করে অভিষেক লেখেন, নারদকাণ্ডের এফআইআরে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে তদন্ত হোক।
অন্য দিকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছিল বিকাল ৫টা ৪৪ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটের মধ্যে চাঁদের মাটি ছোঁবে চন্দ্রযান-৩। অভিষেকের শেষ টুইটটি ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ শুরুর ৪ মিনিট আগে। তার পর বেশ খানিকক্ষণ কেউই আর টুইট করেননি। কিন্তু রাত আটটা বাজতেই ফের শুরু করেন বিরোধী দলনেতা।
অভিষেকের দ্বিতীয় টুইটটি কে রিটুইট করে শুভেন্দু লেখেন, রুজিরা নারুলা কে? মেনকা গম্ভীরই বা কে? আপনি লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর ছিলেন। এখন কারা সেই সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন সেটা কি সামনে আনবেন?
শুভেন্দুর এই টুইটের জবাবে অভিষেক রাত ৮টা ৩৯ মিনিটে ফের একটি টুইট করেন। তাতে তিনি লেখেন, একজন ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতে নিজের বাবা-ভাইকেও দর কষাকষিতে নামিয়েছেন। তাঁর অন্যের আত্মীয়দের নিয়ে কথা বলা সাজে না। সেইসঙ্গে খোঁচা দিয়ে আরও লিখেছেন, তাঁরা যেন কোন দলে রয়েছেন?
রাত ৯টা ১০ মিনিটে আবার টুইট করেন শুভেন্দু। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘অর্জুন সিংহ, মুকুল রায়, কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাস, তন্ময় ঘোষ, সুমন কাঞ্জিলালেরা কোন দলে রয়েছেন?’’ প্রসঙ্গত, এঁরা বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতলেও পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।