নোবেলজয়ী: পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বেণীনগর গ্রামে অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
তুলো উৎপাদন থেকে তাঁতের কাপড় তৈরি করা— ধাপে ধাপে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে কর্মকাণ্ড চলছে। তা নিয়ে কৌতূহল থাকায় পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমার দুই গ্রামে শুক্রবার ঝটিকা সফর করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁত-যন্ত্রের সামনে বসে কাপড় বোনা দেখেন। কয়েকটি শাড়িও কেনেন তিনি।
অভিজিৎ শনিবার বলেন, ‘‘তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে শান্তিপুর, ধনেখালির তাঁতিদের কাছে গিয়েছিলাম। এত দিন পরে আবার গেলাম। বাংলার শাড়ি এখন আন্তর্জাতিক বাজারের একটা অংশ। কেবল প্রযুক্তি বদলেছে, তা নয়, প্রত্যাশাও বদলে গিয়েছে। নতুন নতুন চাহিদা তৈরি হচ্ছে।’’ উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি অর্গানিক কটন (জৈব কাপাস) দিয়ে তৈরি কাপড়ের চাহিদার কথা টানেন। বলেন, ‘‘চাষি কোথা থেকে জৈব কাপাস পাচ্ছেন? কাপড়ের মান নিয়েও প্রত্যাশা বদলেছে। কী করে চাষিরা এত নতুন নতুন চাহিদা সামলাচ্ছেন, কোথা থেকে নতুন প্রযুক্তি পাচ্ছেন, সেটা দেখতে গিয়েছিলাম। কেবল ব্যবসায়ী সুতো দিলেন, আর তাঁতি শাড়ি তৈরি করে দিলেন, তা তো নয়।’’
অর্থনীতিবিদ জানান, কাপাস আসছে গুজরাতের ভুজ থেকে। তা দিয়ে সুতো তৈরি হচ্ছে তামিলনাড়ুতে, কখনও বা মুর্শিদাবাদে। ‘ডিজ়াইনার’ বসে আছেন জয়পুরে। কাপড় বোনা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। অভিজিতের কথায়, ‘‘ সে কাপড়ের জমি হয়তো জামদানির, কিন্তু নকশা অন্য দেশের। খুব বিস্তৃত একটা ব্যবস্থা। তার প্রতিটা ধাপ সম্পর্কে তাঁতি বেশ ওয়াকিবহাল। আবার যখন আসব, তাঁতিদের কাছে যাব। বেশ কয়েক বার কথা বললে বোঝা যাবে, ব্যাপারটা কী হচ্ছে। আপাতত এটা কেবল আমার কৌতূহলের বিষয়।’’
নোবেলজয়ীর এই সফরে উচ্ছ্বসিত কেতুগ্রামের বেণীনগর ও কাটোয়ার আমডাঙার তাঁতিরা। শুক্রবার বেণীনগরে গিয়ে তিনি হস্তচালিত তাঁত দেখেন, কাপড় তৈরির পদ্ধতি দেখেন। স্থানীয় বস্ত্র ব্যবসায়ী তথা তাঁতশিল্পী রঘুনাথ সিংহ বলেন, “উনি ২০ দিন আগে যোগাযোগ করেন। বারান্দায় বসে কাঁসার থালায় ভাত, শাক ভাজা, আলু-পোস্ত, ফুলকপির তরকারি, মাছের ঝোল ও চাটনি দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরেছেন। ভাবা যায় না!’’ আমডাঙার তাঁতি গৌতম দাসের দাবি, “উনি আমার কাছে দু’টি শাড়ি কেনেন।’’
বেণীনগরে অভিজিতের সফরের সময়ে হাজির ছিলেন কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুকান্ত রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “এত বড় মাপের মানুষ প্রত্যন্ত গ্রামে এসে সরল ভাবে মানুষের সঙ্গে মিশে যাবেন, না দেখলে বিশ্বাস হত না!’’