মুখ্যমন্ত্রী ও নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক বৈঠক। বৃহস্পতিবার নবান্নে। ছবি: পিটিআই।
মোদী সরকারের দাবি, কোভিডের ধাক্কা সামলে ধীরে হলেও মাথা তুলছে দেশের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের (আইএমএফ) পূর্বাভাস, বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৯.৫ শতাংশের আশেপাশে। কিন্তু নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, শেষমেশ তা থমকে যাবে ৬-৭ শতাংশে। তা-ও যদি নতুন সংক্রমণের ঢেউ আর না আসে।
বৃহস্পতিবার নবান্নে গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের বৈঠকে যোগ দিতে এসে অভিজিতের অভিযোগ, অতিমারির ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে দ্রুত চাঙ্গা করতে আমজনতার হাতে নগদের জোগান বাড়ানোর পথে হেঁটেছে আমেরিকা, ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ার বড় অংশ। ভারতেরও তা করা উচিত ছিল। প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়েও। কিন্তু সেই পরামর্শ কানে তোলেনি কেন্দ্র।
অনেক সময়ে বলা হয়েছে, নগদের জোগান ও ভাবে বাড়ালে মাথা তুলতে পারে মূল্যবৃদ্ধির হার। কিন্তু পেট্রল-ডিজেলের আগুন দরের জন্যও যে কার্যত সেই একই সমস্যা মাথাচাড়া দিচ্ছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন অভিজিৎ। তার উপরে তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে তেলে সেস সংগ্রহ
প্রায় ৭% থেকে এখন বেড়ে হয়েছে ১৬%। তার ভাগ রাজ্যগুলির ঘরে না-আসায় তাদের আয়ও কমেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে ধাক্কা বলে সরব রাজ্য সরকারও। নোবেলজয়ীর কথায়, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর সংগ্রহ সে ভাবে হচ্ছে না। ফলে এ ভাবেই (তেলে চড়া হারে কর ও সেস বসিয়ে) বাজেটে ভারসাম্য আনার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে যা আর্থিক পরিস্থিতি, এই পথ বিকল্প নয়। বরং অবশ্যই দরকার মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া।”
উঠেছে পরিযায়ী শ্রমিক প্রসঙ্গও। অর্থনীতিবিদের কথায়, “আমাদের রাজ্যে অনেকটা আয় আসে পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে। সুতরাং একা এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতি যত সচল হবে, তত গতি বাড়বে আমাদের রাজ্যের অর্থনীতির। অনেকে বাইরে গিয়ে কাজ করেন। সেই আয়ের সূত্র যতদিন না-ফেরে, তত দিন অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়া শক্ত।”
বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যে পর্যাপ্ত চাকরি নেই বলেই ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাজ জোগাড় করতে হচ্ছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক এ রাজ্যে ফিরে এসেছেন, তাঁদের সকলকে আমরা কাজ দিয়েছি। বিনামূল্যে রেশন, চিকিৎসা পরিষেবাও দেওয়া হয়েছে।”