Accident

ক্ষতিগ্রস্ত স্বরযন্ত্রের পুনর্গঠনে স্বর ফিরল যুবকের

গত জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল বর্ধমানের পানাগড়ের কাছে।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১৪
Share:

রাজকুমার বাসুরী।

চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর কোনও দিন কথা বলতে পারবেন না যুবক। পথ দুর্ঘটনায় দশ টুকরো হয়ে গিয়েছিল তাঁর স্বরযন্ত্রের (ল্যারিঞ্জিয়াল) থাইরয়েড কার্টিলেজ। ফলে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল স্বরযন্ত্রের কাঠামোটাই। ওই কাঠামো যে সমস্ত কার্টিলেজ দিয়ে তৈরি হয়, তার মধ্যে সব চেয়ে বড় থাইরয়েড কার্টিলেজ।

Advertisement

গত জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল বর্ধমানের পানাগড়ের কাছে। নিজেই মোটরবাইক চালিয়ে অফিস থেকে ডোমরার বাড়িতে ফিরছিলেন রাজকুমার বাসুরী। পথে বিদ্যুতের স্তম্ভ থেকে ঝুলন্ত ধাতব তারের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় রাজকুমারের গলার চামড়া ও পেশি ভেদ সেই আঘাত পৌঁছে যায় কার্টিলেজে। ওই অবস্থাতেই পরিবারকে খবর দেন তিনি। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। ট্র্যাকিয়োস্টমি (গলার কাছে শ্বাস নেওয়ার কৃত্রিম ছিদ্রপথ) করা হলেও সেখানে চিকিৎসার অগ্রগতি না দেখে রাজকুমারকে কলকাতায় নিয়ে আসেন পরিজনেরা।

বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইএনটি হেড অ্যান্ড নেক শল্য চিকিৎসক শান্তনু পাঁজার নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচার করে। দুই পর্যায়ে সেই অস্ত্রোপচার হয়। প্রথম পর্যায়ে ল্যারিংসে স্টেন্ট ঢুকিয়ে টাইটেনিয়াম পাতের সাহায্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়া স্বরযন্ত্রের কাঠামোর পুনর্গঠন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পেশিরও মেরামত করা হয়। এর ঠিক দু’সপ্তাহ পরে স্টেন্টটি বার করে নেওয়া হয়।

Advertisement

বর্তমানে রাজকুমারের ট্র্যাকিয়োস্টমি বন্ধ করা হয়েছে এবং রাইলস টিউব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খাওয়াদাওয়া এবং জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে ৮০ শতাংশ। যে ২০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে, তা মূলত রাজকুমারের স্বরে। সেই ঘাটতি পূরণের জন্য চলছে ফিজ়িয়োথেরাপি। এখন তাঁর গলার স্বর বেশ কিছুটা হাল্কা, তবে বোঝা যায়, জানালেন স্ত্রী শ্রেয়া বাসুরী। চিকিৎসক শান্তনু পাঁজার কথায়, “এত কমবয়সি একটি ছেলেকে সুস্থ করাই ছিল আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। রোগী যখন এসেছিলেন, তখন শুধু ট্র্যাকিয়োস্টমি ছাড়া আর কোনও চিকিৎসা হয়নি বলতে গেলে। বরং সিভিয়র নিউমোনিয়া ছিল। সেই ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করে এই অস্ত্রোপচার হয়। রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। বাকি স্বর স্বাভাবিক করতে ফিজ়িয়োথেরাপি করে যেতে হবে নিয়মিত।”

ক্যানসার চিকিৎসক সৌমেন দাসের কথায়, “শ্বাসনালী বা স্বরযন্ত্রের ক্যানসারে এই ধরনের অস্ত্রোপচার হয় ঠিকই, তবে ট্রমার কারণে এমন অস্ত্রোপচার করার পরে রোগীর সুস্থ হওয়াটা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া, এই সংক্রমণের আবহে ঠিক সময়ে এত দূর থেকে আসা এক জন রোগীর যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া অবশ্যই ডাক্তার-রোগী সকলের কাছেই উৎসাহের।’’ শ্রেয়া বললেন, “দুর্ঘটনার পরে দিনকয়েক হল ও অফিস যাচ্ছে। এটা ওর দ্বিতীয় জীবন। চিকিৎসকেরাই এ বার ওর জন্মদাতা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement