সুচিত্রা মণ্ডল (৪৫) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। প্রতীকী ছবি।
দুর্গাপুজোর চাঁদা নিয়ে গোলমালের ঘটনায় সোমবার মুর্শিদাবাদের সন্ন্যাসীডাঙায় সুচিত্রা মণ্ডল (৪৫) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন দুই মহিলা সহ মোট পাঁচ জন। সোমবার রাতে মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে।
ধৃতদের বাড়ি মুর্শিদাবাদ থানার সন্ন্যাসীডাঙাতেই। মঙ্গলবার তাঁদের লালবাগ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক দুই মহিলা সহ চার জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এক জনকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রামেরই পুজো মণ্ডপে এক জনের মৃত্যু এবং তাকে কেন্দ্র করে গ্রামের পাঁচ জন গ্রেফতার হওয়ার জেরে গোটা এলাকা থমথম করছে।
অষ্টমীর সকাল থেকেই পুজো মণ্ডপ চত্বরেও লোকজনের আনাগোনা কম। এক প্রকার নিয়মরক্ষার দুর্গাপুজো হচ্ছে সেখানে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারের লোকজন খুনের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়েছে। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ মৃতের ভাগ্নে ওই গ্রামের বাসিন্দা মৃন্ময় মণ্ডল জানান, মন্দিরের উৎসব অনুষ্ঠান গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়।
কিন্তু গ্রামের দু’টি পরিবার বরাবরই চাঁদা দিতে চায় না। এ বারেও দুর্গাপুজোয় চাঁদা না দেওয়ায় অষ্টমীর সকালে মন্দিরে পুজো দিতে এলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। ওই দুই পরিবারের লোকজনকে পুজো ও অঞ্জলি দিতে নিষেধ করা হয়। মৃন্ময় বলেন, ‘তখনই তাঁরা মন্দিরে লোকজনের উপরে ঝাপিয়ে পড়েন। মামিমাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে খুন করেন।’’ মন্দিরে উপস্থিত ওই গ্রামের বাসিন্দা বিশাখা সরকার বলেন, ‘‘একটি জলজ্যান্ত মানুষকে ওরা মেরে ফেলল। ওদের কঠোর শাস্তি চাই।’’মুর্শিদাবাদ থানা এলাকায় পড়লেও সন্ন্যাসীডাঙা গ্রামটি বহরমপুর শহরের অদূরে। ওই গ্রামে কাটিগঙ্গার পাশে দীর্ঘ দিনের পুরনো রক্ষাকালী মন্দির রয়েছে। সেখানে বরাবরই কালীপুজো হয়ে আসছে। কিন্তু বছর দশেক থেকে সেখানে দুর্গাপুজোও হচ্ছে।
মন্দির কমিটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মাসখানেক আগে নাম হরিনাম সঙ্কীর্তনের জন্য গ্রামের অন্যরা চাঁদা দিলেও ওই দু’টি পরিবার তা দেননি। এ বারে তাঁরা দুর্গাপুজোর চাঁদাও দেননি। এ নিয়ে মন্দির কমিটির সঙ্গে তাঁদের বিরোধ ছিল।
সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ ওই দুই পরিবারের কয়েক জন মহিলা মন্দিরে পুজো এবং অঞ্জলি দিতে আসেন। তখন মন্দির কমিটির তরফে এক দল মহিলা তাঁদের বাধা দেন। সে সময় পুজো দিতে আসা মহিলারা মন্দির কমিটির লোকজনের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন।
মন্দির কমিটির সম্পাদক তথা মৃতার দেওর জয়দেব মণ্ডলের দাবি, ‘‘ওরা চাঁদা দেয়নি। উল্টে জোর করে পুজো দিতে এসেছিল। চাঁদা ছাড়া পুজো দিতে দেওয়া হবে না বলতেই ওরা গোলমাল শুরু করে। বৌদিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এর পরে বাঁশ মেরে খুন করে। আমরা ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মন্দির কমিটি থেকে শুরু করে পাড়ার লোকজনের এই ঘটনার জেরে মন খারাপ। তাই পুজোতে আনন্দ নেই। পুরোহিত বাজার করা থেকে শুরু করে পুজোর যাবতীয় কাজ করছেন।’’