শুভম রাঙা। —নিজস্ব চিত্র।
তার পড়ে ছিল মাছের ভেড়ির পাশে। খেলতে খেলতে সেই তারে পা জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে মৃত্যু দশ বছরের এক শিশুর। পুলিশ সূত্রে খবর, শিশুর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। পরে তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘অবৈধ’ ওই মাছের ভেড়িটিতে বেআক্কেলের মতো বিদ্যুতের তার টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই খোলা তারে পা লেগেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।
মহিষাদল থানার মলুবসান গ্রামের বাসিন্দা শুভম রাঙা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়ির অদূরে বল নিয়ে খেলছিল সে। বলটি গড়িয়ে ভেড়ির দিকে চলে গিয়েছিল। সেটি কুড়োতে গিয়েই বিদ্যুতের তারে পা জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরেও ঘরে না আসায় শুভমকে খুঁজতে বেরোন পরিবারের লোকেরা। তখনই ভেড়ির পাশ থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার হয়। শুভমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। শনিবার শুভমের স্কুলে পরীক্ষা ছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনায় তা বাতিল করে ছুটি দেওয়া হয়েছিল স্কুল।
শুভমের বাবা গৌরাঙ্গ রাঙা টায়ারের দোকানে কাজ করেন। শুভম ছাড়াও তাঁর এক মেয়ে রয়েছে। গৌরাঙ্গ বলেন, ‘‘বিঘার পর বিঘা ধান চাষের জমি কেটে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে তৈরি হয়েছে মাছের ভেড়িটা। পাশে একটা বাড়ি থেকে ওই ভেড়িতে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই তারেই আমার ছেলে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়েছে। যারা এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
স্থানীয় সূত্রে দাবি, মহিষাদল থানা এলাকায় গত কয়েক বছরে হাজার হাজার বিঘা ধানজমি লিজে নিয়ে গড়ে উঠেছে একের পর মাছের ভেড়ি। প্রশাসনের নাকের ডগায় জমির চরিত্র বদল না করেই সেগুলিকে কেটে ঝিল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ভেড়িগুলিতে পাকাপাকি ভাবে বিদ্যুৎসংযোগ না থাকায় বাড়ি থেকেই খোলা তারে বিদ্যুৎ টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মলুবসান গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিক। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় মহিষাদল থানায় এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে অভিযোগ এলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।