গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুন্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে এ বার নদিয়ার রানাঘাটে গেল যাদবপুর থানা এবং কলকাতা পুলিশের একটি দল। রানাঘাটে রথতলায় স্বপ্নদীপের মামাবাড়ি। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ সেখানেই যায় পুলিশের চার সদস্যের ওই দলটি। পরিবার সূত্রে খবর, ঘণ্টাখানেক স্বপ্নদীপের মামার সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ওই ব্যক্তির বয়ানও রেকর্ড করা হয়। পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, স্বপ্নদীপের মামাবাড়ি থেকে এমন দু’টি খাতাও তদন্তকারীরা সংগ্রহ করেছেন, যে খাতায় তাঁর হাতের লেখা রয়েছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের যে ঘরে স্বপ্নদীপ থাকছিলেন ‘অতিথি’ হিসাবে, সেই ঘর থেকে একটি ‘হলুদ’ ডায়েরি মিলেছে। শুধু তা-ই নয়, তদন্তকারীদের ওই সূত্রের দাবি, ডায়েরিতে এমন কিছু লেখা রয়েছে, যার সঙ্গে ঘটনার যোগ থাকলেও থাকতে পারে। সেই ডায়েরির হাতের লেখা স্বপ্নদীপের কি না, তা যাচাই করতেই রানাঘাটের মামাবাড়ি থেকে দু’টি খাতা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এক মাত্র ধৃত সৌরভ চৌধুরীর ভূমিকা রয়েছে। তাঁর সঙ্গে স্বপ্নদীপের পরিবারের যোগাযোগ কী ভাবে হল, কী কথা হয়েছিল, সবই সবিস্তারে জানতে পরিবারের লোকেদের বয়ানও সংগ্রহ করা হয়েছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।
প্রসঙ্গত, স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডুর লিখিত অভিযোগে সৌরভের নাম ছিল। অভিযোগ, সৌরভ-সহ কয়েক জন স্বপ্নদীপের উপর অত্যাচার করেছেন। তার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, ঘটনার সঙ্গে সৌরভের যোগ মিলেছে। স্বপ্নদীপের পরিবার সূত্রে খবর, বুধবার মায়ের সঙ্গে স্বপ্নদীপের কথা হয়েছিল ফোনে। ফোনে বার বার তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বলছিলেন স্বপ্নদীপ। রামপ্রসাদের অভিযোগ, বুধবার রাতে যখন র্যাগিং চলছিল, সেই সময় তাঁরা স্বপ্নদীপের মোবাইলে ফোন করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় স্বপ্নদীপকে ফোন তুলতে দেওয়া হয়নি। ফোন সৌরভের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে দাবি মৃত পড়ুয়ার পিতার। রামপ্রসাদের দাবি, ছেলের মোবাইলে বার বার ফোন করা সত্ত্বেও কেউ তোলেননি। বরং, ও দিক থেকে ঘুরিয়ে ফোন করা হয়েছিল। বাবার কথায়, ‘‘ওকে (স্বপ্নদীপকে) সিনিয়রেরা ফোনে বলতে বলছিল, ‘বল ভাল আছিস’। আর ছেলে ফোনে মা-বাবা করে আর্তনাদ করছিল। ক্রমাগত বলে যাচ্ছিল, ‘মা, আমি ভাল নেই। আমাকে নিয়ে যাও। আমার অনেক কথা বলার আছে। ওই সময়েই ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়।’’
স্বপ্নদীপের মায়ের সঙ্গেও কথা বলে আনন্দবাজার অনলাইন। তিনিও বলেন, ‘‘ছেলে ফোনে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। বার বার বলছিল, ‘মা আমায় বাঁচাও! আমি ভাল নেই। আমার অনেক কথা বলার আছে। এই অনেক কথা বলা আছে— যখনই বলেছে ছেলে, তখনই সৌরভ ফোন কেড়ে নিয়েছিল।’’ রামপ্রসাদের দাবি, সৌরভকে স্বপ্নদীপের ব্যাপারে বার বার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সৌরভ জানিয়েছিলেন, স্বপ্নদীপ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িয়ে গিয়েছে। তা নিয়েই সমস্যায় রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সৌরভ আমাদের বার বার আশ্বস্ত করছিল যে, স্বপ্নদীপ ঠিক আছে। ভালই আছে। আমাদের চিন্তা করতে বারণ করছিল। সৌরভ বলছিল, ও সব সামলে নেবে।’’
যাদবপুরকাণ্ডে সৌরভকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার পাশাপাশি শুক্রবার রাত পর্যন্ত আরও ছ’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে খবর মিলেছে পুলিশ সূত্রে। সকলের বয়ানের সূত্র ধরে তদন্তকারীরাও জানতে পেরেছেন, স্বপ্নদীপের ফোনটি সৌরভ নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বাড়ির লোকের সঙ্গে স্বপ্নদীপ যখন ফোনে কথা বলছিলেন, সেই সময় তাঁর ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। সৌরভই এর নেপথ্যে ছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি স্বপ্নদীপের পরিবারও। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সব দিয়ে খতিয়ে দেখে যাচাই করার চেষ্টা চলছে।