ছবি প্রতীকী
মন দিয়ে সিরিয়াল দেখছিল চোদ্দো বছরের মেয়েটি। বাড়িওয়ালার ছেলে পাঁচ বছরের অর্পণের তা একেবারেই পছন্দ নয়। সে দেখতে চায় কার্টুন। তাই চ্যানেল ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছিল বারবার। রেগে গিয়ে ওই কিশোরী গলা টিপে ধরে অর্পণের। তাতেই মৃত্যু হয় ওই শিশুর। পুলিশের কাছে নিজেই সে কথা স্বীকার করেছে ওই কিশোরী।
বুধবার রাতে মেচেদা বাজার লাগোয়া শান্তিপুর গ্রামের পশ্চিম পাড়ার এই ঘটনায় পুলিশ খুনের অভিযোগে ওই নাবালিকাকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘জেরায় মেয়েটি স্বীকার করেছে, সে টিভিতে সিরিয়াল দেখার সময় কার্টুন দেখতে চেয়ে তাকে বিরক্ত করছিল অর্পণ। রেগে গিয়ে তার গলা টিপে ধাক্কা দেয় ওই কিশোরী। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে এতেই মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুর।’’ বৃহস্পতিবার ধৃত কিশোরীকে তমলুক জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হয়েছে।
অর্পণের বাবা-মা জগন্নাথ জানা ও গীতা জানা মেচেদা বাজারে সব্জির ব্যবসা করেন। তাঁদের দুই ছেলে। ছোট অর্পণ স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পড়ত। জগন্নাথবাবুর বাড়ির একটি ঘরে মাস চারেক আগে ভাড়া এসেছিলেন ধৃত কিশোরীর বাবা-মা। তাঁদের আদত বাড়ি পাঁশকুড়ার চাকদহ গ্রামে। ওই দম্পতি মেলায় প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করেন।
দুই পরিবারের ব়ড়রা সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকেন। তাই পাঁচ বছরের অর্পণের দিন কাটত ভাড়াটিয়ার কিশোরী মেয়ের সঙ্গে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার বিকেলে গীতাদেবী মেচেদা বাজারে চলে যান। বাড়িতে ছিলেন জগন্নাথবাবু। বাড়ির আর এক ভাড়াটিয়া সোমনাথ দাসের কাছে প্রতিদিনের মতো পড়তে গিয়েছিল অর্পণ। জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সন্ধে সাড়ে ৭টার মধ্যে ছেলের পড়া হয়ে যায়। কিন্তু ঘুম ভেঙে উঠে দেখি ছেলে ঘরে নেই।’’ রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, অর্পণকে দেখেনি। কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ দেখে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। জোর করে ঘরে ঢুকে খাটের তলা থেকে অর্পণকে উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, সে সময় অর্পণের মুখ থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। মেচেদা বাজারের কাছে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক ওই শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পরে মৃত শিশুর জ্যাঠার অভিযোগের ভিত্তিতে কোলাঘাট থানার পুলিশ ওই কিশোরীকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় গৃহশিক্ষক সোমনাথবাবুকেও। ওই কিশোরীর বাবা-মা বুধবার বাগনানের এক মেলায় গিয়েছিলেন। ঘটনার কথা জানতে পেরে তাঁরা আর ওই বাড়িতে ফেরেননি বলে পুলিশের দাবি।