সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে রাস্টি স্পটেড বিড়াল। ছবি সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গ বনবিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হিল’।
জঙ্গলমহল বাঘের আনাগোনা নিয়ে শোরগোলের মধ্যে পুরুলিয়ার কোটশিলার জঙ্গলে দেখা মিলল ‘রাস্টি স্পটেড’ বিড়ালের। খুব ছোট আকারের হলেও অত্যন্ত হিংস্র শিকারি এই বিড়াল শুধুমাত্র পুরুলিয়া জেলায় নয়, বাংলায় এই প্রথম দেখতে পাওয়া গেল বলে জানিয়েছে বন দফতর। সম্প্রতি কোটশিলার জঙ্গলে বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরায় তার ছবি ধরা পড়েছে। বন দফতরের অনুমান, একটি নয়, ওই জঙ্গলে বেশ কয়েকটি ‘রাস্টি স্পটেড’ বিড়াল থাকলেও থাকতে পারে।
বছর দুই আগে পুরুলিয়ার কোটশিলার জঙ্গলে চিতাবাঘের অস্তিত্ব মিলেছিল। তার পর থেকে স্থানীয়েরা ওই জঙ্গল এড়িয়েই চলেন। ফলে এই জঙ্গলের ভিতরে মানুষের আনাগোনা তেমন নেই বললেই চলে। সম্প্রতি বন দফতর এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ওই জঙ্গলে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে। সেই কাজেরই অংশ হিসাবে কোটশিলার জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় মোট সাতটি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ক্যামেরাগুলির মধ্যে একটিতে ‘রাস্টি স্পটেড ক্যাটের’ ছবি ধরা পড়ে।
সাধারণ বিড়ালের চেয়ে অনেকটাই ছোট হয় রাস্টি স্পটেড ক্যাট। শরীরে মরিচার দাগ। সর্বোচ্চ ওজন এক থেকে দেড় কিলোগ্রাম। শিকারের সময় অত্যন্ত হিংস্র হয় ওই বিড়াল। মূলত পাখি, সাপ, ইঁদুর, গিরগিটি শিকার করেই বেঁচে থাকে তারা। নিজের ওজনের চেয়ে দু’-তিন গুণ বেশি ওজনের প্রাণীকেও শিকার করে খায় এই বিড়াল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাধারণত লোকালয় থেকে দূরে নির্জন গভীর জঙ্গলে বসবাস করে তারা। অতীতে গুজরাটের গির জাতীয় উদ্যান, মহারাষ্ট্রের তাডোবা আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প ও পূর্বঘাট পর্বতমালার জঙ্গলে ওই বিড়ালের অস্তিত্ব মিলেছিল।
রাজ্যে প্রথম কোটশিলার জঙ্গলে এমন প্রাণীর অস্তিত্ব মেলায় খুশি বন দফতর। পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, ‘‘রাস্টি স্পটেড বিড়াল অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রাণী। সাধারণত মানুষের সংশ্রব থেকে অনেক দূরে গভীর জঙ্গলে বসবাস করে এই বিড়াল। কোটশিলার জঙ্গলে এই ধরনের প্রাণীর অস্তিত্বই প্রমাণ করছে জঙ্গলের মানের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে চিতাবাঘের অস্তিত্ব মেলায় কোটশিলার জঙ্গলে এখন সে ভাবে মানুষের যাতায়াত নেই। জঙ্গলের মানও অনেকটা ভাল হয়েছে, যার ফলে জঙ্গলের মধ্যে এই ধরণের প্রাণী নিজেদের নিরাপদ মনে করে বসবাস করছে। এর ফলে জঙ্গলের জীববৈচিত্র আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে।’’