কেরল থেকে এল বিরল গ্রুপের রক্ত। প্রতীকী ছবি।
মহিলার শরীরে বিরলতম বম্বে ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত। অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন ছিল রক্তের। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিলার জন্য সেই রক্ত এল কেরল থেকে।
জরায়ুতে সিস্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব মনসুরা বিবি। গত কয়েক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে দেখানো হয় তাঁকে। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় সরকারি হাসপাতালে। পরে পরীক্ষার পর জরায়ুতে সিস্ট ধরা পরে মনসুরার। এর পর তাঁর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এসএসকেএম-এর চিকিৎসকরা। কিন্তু বাধ সেধেছিল মনসুরার বিরল রক্তের গ্রুপ। রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে দেখা যায় মনসুরার শরীরে বম্বে ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে যা বিরলতম।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটলজি বিভাগের প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্য মনসুরার রক্ত পরীক্ষা করে গ্রুপ চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘‘মনসুরার রক্তের গ্রুপ বিরল। আমাদের রাজ্যে বিরলতম রক্ত গ্রুপের যে তালিকা আছে সেই তালিকা খুঁজেও কোনও রক্তদাতা পাওয়া যায়নি। বছর ২০ আগে এক বার বম্বে ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত পেয়েছিলাম আমরা। মনসুরার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় রক্তের খোঁজ শুরু করি। ওর আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। মনসুরার ভাই-বোন কেউ জীবিত নেই বলে জানতে পেরেছি। না হলে ওঁদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখতাম।’’
এর পর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মনসুরার জন্য রক্তের খোঁজ শুরু হয়। বম্বে পজিটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে মৃদুল দলুই নামে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক সদস্যেরই। তবে তিনি মনসুরাকে রক্ত দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি উদ্যোগ নিয়ে মনসুরার জন্য রক্তের খোঁজ শুরু করেন। দেশ জুড়ে খোঁজ চালিয়ে অবশেষে কেরল থেকে মনসুরার জন্য এক ইউনিট রক্ত পাওয়া গিয়েছে। বুধবার সকালে কেরল থেকে বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় সেই রক্ত। তাতে কিছুটা স্বস্তিতে চিকিৎসকরা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটলজি বিভাগের প্রধানের বক্তব্য, ‘‘এ বারের মতো এক ইউনিট রক্ত পাওয়া গেলেও পরবর্তী কালে মনসুরার আরও রক্ত প্রয়োজন হতে পারে। সে জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’’ মনসুরার বিষয়টি আইসিএমআর-এর গোচরেও আনা বলে জানিয়েছেন তিনি।
রক্ত পাওয়ায় স্বস্তির ছোঁয়া মনসুরার পরিবারেও। তাঁর ছেলে শেখ মুস্তাকিম বলেন, “গত দেড় দু’মাস ধরে বাড়িতে কান্নাকাটি চলছে। সবাই দায়িত্ব নিয়ে যে ভাবে মায়ের জন্য রক্ত জোগাড় করল তাতে ধন্যবাদ দিয়ে এই ঋণ শোধ করা যাবে না। এ বার অস্ত্রোপচারের পর মাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’’