স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে কুমারী পুজো ফতেমাকে

স্বামী বিবেকানন্দের সেই পুজো এ বার আদর্শ বাগুইআটির অর্জুনপুরে। সেখানকার তালতলার দত্তবাড়িতে দুর্গাষ্টমীতে পুজোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে মুসলিম পরিবারের চার বছরের এক কন্যাকে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:২৭
Share:

ফতেমা। নিজস্ব চিত্র

কাশ্মীর ভ্রমণের সময় এক মুসলিম মাঝির শিশুকন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।

Advertisement

স্বামী বিবেকানন্দের সেই পুজো এ বার আদর্শ বাগুইআটির অর্জুনপুরে। সেখানকার তালতলার দত্তবাড়িতে দুর্গাষ্টমীতে পুজোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে মুসলিম পরিবারের চার বছরের এক কন্যাকে। লাল বেনারসিতে সেজে সেই ফতেমা এ বার ‘কালিকা’ (চার বছরের কন্যা যে-নামে পূজিত হন) রূপে বসবে সিংহাসনে।

অর্জুনপুরের দত্ত বাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল ছ’বছর আগে। বাড়ির কর্তা, কামারহাটি পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার তমাল দত্ত জানান, পাড়ার ক্লাবে ২০১২ সালে থিমের প্রতিমায় পুজো নিয়ে আপত্তি করেছিলেন প্রতিবেশীরা। তখন কৃষ্ণনগর থেকে আনা হয়েছিল ছোট দুর্গামূর্তি। সেটাও পছন্দ হয়নি পড়শিদের। তমালের কথায়, ‘‘রাগ করেই ওই মূর্তি বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছিলাম। পরের বছর থেকে আমার বাড়িতেই দুর্গা পুজো শুরু হয়।’’

Advertisement

তমাল জানান, প্রথম বছর থেকেই অষ্টমীতে কুমারী পুজো শুরু করেন তাঁরা। সে-বছর ব্রাহ্মণ পরিবারের শিশুকন্যাকে পুজো করা হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে বিশ্বাসী তমাল পরে মত বদলান। মা রমা এবং স্ত্রী, পেশায় আইনজীবী মৌসুমীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, কুমারী নির্বাচনে জাতপাতের ভেদাভেদ থাকবে না। সেই মতো ২০১৪ সালে অব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, পরের বছর ডোম পরিবারের শিশুকন্যাকে পুজো করা হয়।

প্রতি বছরই পুজোর মাস দুয়েক আগে থেকে পরিচিত মহলে কুমারীর খোঁজ করতে থাকেন তমাল-মৌসুমীরা। বাড়ির পুরোহিতের শর্ত ছিল একটাই, শিশুকন্যাটিকে চার বছরের হতে হবে। কয়েক দিন আগে তাঁর পরিচিত, কামারহাটির বাসিন্দা মহম্মদ ইব্রাহিমের কাছে শিশুকন্যার খোঁজ করেন তমাল। তিনি বলেন, ‘‘জাতপাতের বেড়াজাল ভেঙে বেরোনোই ছিল লক্ষ্য। তাই অনেকের মতো ইব্রাহিমকেও বলেছিলাম, পুজোর জন্য শিশুকন্যার খোঁজ দিতে। সংশয় ছিল, ওঁদের পরিবারের মেয়েকে পুজোর জন্য পাঠাতে ওঁরা রাজি হবেন কি?’’

ইব্রাহিম অবশ্য প্রস্তাব পাওয়ার এক দিনের মধ্যেই ভাগ্নি ফতেমার ছবি পাঠিয়ে দেন তমালকে। জানিয়ে দেন, পরিবারের সকলেই রাজি। ফতেমারা আগরায় থাকে। বাবা মহম্মদ তাহিরের দোকান রয়েছে। মা বসুরা-র সঙ্গে ছোট্ট মেয়েটি এখন ঘুরতে এসেছে মামাবাড়িতে। ইব্রাহিম বলেন, ‘‘আমরা পরিবারের সকলেই প্রস্তাবটা পেয়ে খুব খুশি। সঙ্গে সঙ্গে রাজিও হয়ে যাই। জাত-ধর্ম আলাদা হলেও ঈশ্বর তো আলাদা নন।’’

অষ্টমীর দিন সকালে তমালদের পাঠানো গাড়িতেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্জুনপুরে আসবে ফতেমা। মৌসুমী নিজের হাতে তাকে সাজাবেন বেনারসি, মুকুট, ফুলের মালায়। কপালে রক্তচন্দনের টিপ আর পায়ে লাল আলতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement