পায়ে আঘাত নিয়ে চিকিৎসাধীন সম্রাট সর্দার। শুক্রবার, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ
টানা আট ঘণ্টা হেঁটেছিলাম। মিনাখাঁ থানার পুঁটখালি থেকে বেরিয়ে যখন কচুয়ায় পৌঁছই, তখন রাত প্রায় দেড়টা। যে ইটভাটায় কাজ করি, সেখানকার আরও তিন জন সঙ্গে ছিল। কাজে ঢোকার পরে প্রত্যেক বছর জন্মাষ্টমীতে জল ঢালতে কচুয়ায় যাই। বৃহস্পতিবার যখন কচুয়া পৌঁছলাম, তখন জোরে বৃষ্টি শুরু হল। আমরা একটা ছাউনির মতো জায়গা খুঁজে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বৃষ্টি থামছিলই না। রাত দু’টো নাগাদ ঠিক করি, বৃষ্টি মাথায় নিয়েই হাঁটব। সেই মতো মন্দিরের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করি। মন্দিরে ঢোকার মুখে একটি পাঁচিল রয়েছে। দু’টো লাইন করে লোকজন ঢোকানো হচ্ছিল। হঠাৎ পাঁচিলের অন্য দিক থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। ঠিক কী ঘটছে কেউই তখন বুঝতে পারিনি। ক্রমশ ভিড়ের ঠেলাঠেলি, চিৎকার বাড়তে লাগল। কান্নার শব্দও পাচ্ছিলাম। ভয় করতে শুরু করেছিল। এরই মধ্যে হুড়মুড়িয়ে পাঁচিল ভেঙে পড়ল। আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল, দেখি আমি রাস্তায় পড়ে। বাঁ পা-টা পাঁচিলের তলায়। আরও অনেকে দেখলাম, পাঁচিলের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে। অন্ধকারে তখন চারপাশে শুধু কান্নার রোল। হঠাৎ আমি টের পেলাম, পা পাঁচিলের তলা থেকে বার করতে পারছি না। চেঁচামেচি করায় আমার সঙ্গে যারা ইটভাটা থেকে এসেছিল, তাদের এক জন এসে আমার পা-টা টেনে বার করে। বাঁ পায়ের হাঁটুর নীচের মাংস বেরিয়ে গিয়েছিল। সেলাই পড়েছে ১৭টা। খুব যন্ত্রণা রয়েছে। কিন্তু সেই যন্ত্রণা যেন মনে হচ্ছে কিছুই না। বেঁচে গিয়েছি, এটাই সব চেয়ে বড় কথা। এর আগেও তিন বার জল ঢালতে গিয়েছি। এ রকম অবস্থা হয়নি।