চুক্তিভিত্তিক চাকরির কাজে মাসিদুর রহমান। নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক এবং ফুড ইনস্পেক্টরের পদে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে, ইন্টারভিউয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে প্যানেলে নাম উঠেছে মালদহ কালিয়াচকের মাসিদুর রহমানের। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই চাকরি হয়নি। নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগের জেরে আইনি জটিলতায় আটকে আছে তিনটি চাকরিই। তাই চাকরির দাবিতে কখনও প্রাথমিকের, কখনও উচ্চ প্রাথমিকের, কখনও পিএসসি-র চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ মঞ্চে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাসিদুর।
কাজ অবশ্য একটা পেয়েছেন ওই যুবক। সেটা গ্রামীণ সম্পদ কর্মী হিসেবে চুক্তিভিত্তিক চাকরি। সেখানে তাঁর দৈনিক বেতন ১৭৫ টাকা।
মাসিদুর জানান, তিনি ফর্ম পূরণ এবং চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেন ২০১৪ সালে। ওই বছরেই উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকের চাকরির ফর্ম পূরণ করেছিলেন। ২০১৫-র লিখিত পরীক্ষার ফল বেরোয় ২০১৬ সালে। সেই বছরের জুলাইয়ে ইন্টারভিউয়ের পরে ২০১৯ সালে প্রকাশিত মেধা-তালিকা তাঁর নাম ছিল। কিন্তু সেই তালিকায় অস্বচ্ছতার অভিযোগে মামলা হওয়ায় আদালত তালিকাটি বাতিল করে দেয় ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর। নতুন প্যানেল তৈরির জন্য ফের ইন্টারভিউ শুরু হলে আবার ইন্টারভিউ দেন তিনি। সেই ইন্টারভিউ শেষ হয় ২০২১-এর জুলাইয়ে। মাসিদুর বলেন, “দু’বার ইন্টারভিউ দেওয়া হয়ে গেল। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হল না।”
মাসিদুর জানান, উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি পেতে দেরি হতে থাকায় তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি-র ফুড ইনস্পেক্টর পদের পরীক্ষায় বসেন। তিনি বলেন, “ফুড ইনস্পেক্টর পদে লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালে। ২০২০-র ডিসেম্বরে ইন্টারভিউয়ের পরে ফল বেরোয় ৩১ ডিসেম্বর। ওই প্যানেলে শূন্য পদ ছিল ৯৫৭টি। ১০০ জন কাজে যোগ দেওয়ার পরে নানা জটিলতায় নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। প্যানেলে আমার নাম ছিল ৭৪০ নম্বরে।”
মাসিদুর প্রাথমিকে চাকরির ফর্ম পূরণ করেন ২০১৪ সালে। ২০১৫-র পরীক্ষায় পাশ করার পরে ২০১৬ সালে ইন্টারভিউ হয়। মাসিদুর বলেন, “প্রাথমিকে আমি মেধা-তালিকায় ‘নট ইনক্লুডেড’ প্রার্থী। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২০১৪ প্রাইমারি টেট পাশ সব প্রার্থী অর্থাৎ ২০ হাজার চাকরিপ্রার্থীকে ধাপে ধাপে নিয়োগ করা হবে। সেই অনুযায়ী প্রাথমিকেও আমার চাকরি হওয়ার কথা।”
কখনও মুদিয়ালির পিএসসি ভবন, কখনও সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিস, কখনও আবার সল্টলেকের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে ধর্নায় বসছেন মাসিদুর। তিনি বলেন, “এক বার পিএসসি-তে চাকরির জন্য ধর্না দিচ্ছিলাম। অবস্থানকারী কয়েক জন আমাকে সন্দেহ করে বলেন, তোমাকে তো মনে হয়, উচ্চ প্রাথমিকের ধর্নাতেও দেখেছিলাম! তখন আমি ওঁদের সমস্ত নথি দেখিয়েছি।”
মাসিদুরের অভিযোগ, যখন উচ্চ প্রাথমিকে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২৪। এখন তাঁর বয়স ৩২ বছর। কোথাও কোনও আলোর দিশা দেখতে না-পেয়ে মাসিদুর এখন তাঁর জেলায় গ্রামীণ সম্পদ কর্মী হিসেবে ডেঙ্গি প্রতিরোধে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করছেন। কোনও মাসে ৩০ দিন কাজ পেলে তবেই ৫২৫০ টাকা পান। তাঁর প্রশ্ন, “মা-বাবার ওষুধপত্রের খরচ আছে। এই টাকায় সংসার চলে? কয়েকটি ছাত্র পড়াচ্ছি। কিন্তু হকের চাকরিটা কবে পাব বলতে পারেন?”
পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, “সারা রাজ্যে মাসিদুরের মতো অনেক প্রার্থী আছেন, যাঁরা যোগ্য হয়েও বিভিন্ন দফতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কলকাতা হাই কোর্টে মামলার পর মামলা হচ্ছে। বিষয়গুলি দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন থাকায় নিয়োগ অধরা থেকে যাচ্ছে।”