বছরভর টলিউডে কোন ছয় কেচ্ছার ছড়াছড়ি। গ্রাফিক-আনন্দবাজার অনলাইন।
যিশুর জীবনে প্রেমযাতনা:
সফল দম্পতি হিসেবে অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত ছিলেন টলিপাড়ার ‘মহাপ্রভু’ যিশু সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী নীলাঞ্জনা। ২১ বছরের দাম্পত্য, দুই কন্যা অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারেনি। ২০২৪ সালেই ঘর আলাদা হল যিশু-নীলাঞ্জনার। সৌজন্যে ‘অন্য প্রেমের গান’!
হঠাৎই কানাঘুষো শোনা যায়, নিজের আপ্তসহায়কের প্রেমে পড়েছেন অভিনেতা! তাঁর টানেই নাকি এত বছরের সংসার ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন যিশু। যদিও এ নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। নীলাঞ্জনা সমাজমাধ্যমে একের পর এক ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে চলেছেন। সরাসরি কথা বলেননি। এই টানাপড়েনে গুজব রটে গিয়েছিল, নতুন প্রেমের সম্পর্ক যিশু এত দূর এগিয়েছেন যে দুই মেয়ের পর ফের বাবা হতে চলেছেন তিনি। বছরশেষে সেই রটনায় জল ঢালার চেষ্টা করেছেন অভিনেতার ঘনিষ্ঠেরা। সত্য অবশ্য জানা যায়নি কোনও ভাবেই।
এ বছরের অন্যতম চর্চিত বিচ্ছেদ। ছবি: সংগৃহীত।
চুমুর ফাঁদে অরিন্দম শীল:
টলিপাড়ার চর্চিত পরিচালক অরিন্দম শীল। থ্রিলারধর্মীর ছবির দিকেই তাঁর ঝোঁক। তা বলে এমন ‘থ্রিল’ তিনি শুটিং ফ্লোরেও নিয়ে আসবেন, ভাবেননি দর্শক। চলতি বছরই তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলেন এক অভিনেত্রী। দাবি, ছবির দৃশ্য বোঝানোর অছিলায় আলতো চুমু খেয়েছেন নতুন প্রজন্মের এক অভিনেত্রীর গালে।
তবে এই প্রথম নয়। পরিচালকের বিরুদ্ধে এর আগে ‘মিটু’ জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র। এ বার সরাসরি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এক নতুন প্রজন্মের এক অভিনেত্রী। দ্বারস্থ হন মহিলা কমিশনেরও। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। অভিযোগকারিণী অভিনেত্রী মন দিয়েছেন মুম্বইয়ে কাজের সন্ধানে।
ছবির দৃশ্য বোঝানোর অছিলায় আলতো চুমু খেয়েছেন, অভিযোগ অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে। ছবি: সংগৃহীত।
‘লাজুক’ পরিচালকের হাজতবাস:
মিতভাষী লাজুক স্বভাব। ছবির সংখ্যা সাকুল্যে তিন। চলতি ডিসেম্বরে পরিচালক সৌম্যজিৎ আদকের বিরুদ্ধে উঠল ধর্ষণের অভিযোগ। এক উঠতি অভিনেত্রীর সঙ্গে সমাজমাধ্যমে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন। অভিযোগ এমনই। তার পর সৌম্যজিৎ নাকি ওই অভিনেত্রীকে নিজের বুটিকে ডেকে ধর্ষণ করেন। সেটা গত অগস্টের ঘটনা। অভিনেত্রী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ডিসেম্বরে। সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় সৌম্যজিৎকে। তিনি এখনও বিচারাধীন, পাননি জামিন।
পরিচালক সৌমজিৎ আদকের বিরুদ্ধে উঠল ধর্ষণের অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত।
ঋষি কৌশিকের কপোল কল্পনায় চটলেন স্ত্রী:
দিব্যি ছিলেন খোশমেজাজে অভিনয় নিয়ে। হঠাৎ যে কী হল ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ঋষি কৌশিকের, সমাজমাধ্যমে শোনালেন এক ‘নিপীড়িত স্বামী’র করুণ কাহিনি। নিজের বা স্ত্রীর নাম না করেই বুঝিয়ে দিলেন কষ্টে রয়েছেন তিনি।
এ দিকে তাঁর প্রায় ১২ বছরের দাম্পত্য দেবযানী চক্রবর্তীর সঙ্গে। আপাতদৃষ্টিতে সুখী দম্পতি বলেই ঠাওর হত। বিভিন্ন রিয়্যলিটি শোয়ের মঞ্চে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। কিন্তু সেই সংসারে যেন ধরল ফাটল। স্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ না করে, সমাজমাধ্যমে কাল্পনিক গল্প দিয়ে তাঁর জীবনের কাহিনি তুলে ধরেছিলেন ঋষি। ঋষির অভিযোগ, মদ্যপান, ধূমপান, পুরুষসঙ্গীর সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর মতো নানা কাণ্ড করেন স্ত্রী। সরাসরি নাম না করলেও দেবযানী ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন। স্বামীর কাছে সরাসরি জবাবদিহি চান। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন। আপাতত ছাদ আলাদা দেবযানী ও কৌশিকের। তবে পাকাপাকি বিচ্ছেদ হয়নি তাঁদের।
ঋষি কৌশিক, সমাজমাধ্যমে শুনিয়েছিলেন এক ‘নিপীড়িত স্বামী’র করুণ কাহিনি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রণজয়ের প্রেমরঙ্গ:
রণজয় নাকি বাস্তবে জীবনে ‘রিকি বহেল’! ছবি: সংগৃহীত।
ছোট পর্দার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ রণজয় বিষ্ণু। অভিনেত্রী সোহিনী সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে একসময় চর্চা ছিল বিস্তর। গত বছর ভাঙে সেই প্রেম। ২০২৪-এ গায়ক শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘর বাঁধেন সোহিনী। সে খবর শুনে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন রণজয়। তাতেই চটেন সোহিনী। তার পরই শুরু হয় কেঁচো খোঁড়াখুঁড়ি, বেরিয়ে আসে কেউটে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অভিনেতার জীবনের নানা সময়ে যত সঙ্গিনী ছিলেন, সকলে একবাক্যে অভিযোগের আঙুল তোলেন— রণজয় নাকি বাস্তবে জীবনে ‘রিকি বহেল’! প্রেমিকাদের ঘাড় ভেঙেই নাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি! রণজয় অবশ্য সকল প্রাক্তনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তবে, তত দূর গড়ায়নি জল। কিছু দিন যেতে না যেতেই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ। আপাতত অভিনয়ে ব্যস্ত রণজয়। প্রাক্তন প্রেমিকারা নিজ নিজ সংসারে।
শ্রীলেখার অভিযোগে বিদ্ধ দক্ষিণী পরিচালক:
মালয়লম চলচ্চিত্র জগতের পায়ের তলার মাটি নড়িয়ে দিয়েছে জাস্টিস হেমা কমিশন রিপোর্ট। একের পর এক অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রীরা। সেই আবহে বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন টলিপাড়ার ‘ঠোঁটকাটা’ অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনেন অভিনেত্রী। ২০০৯ সালের ‘পালেরি মনিক্যম: ওরু পাথিরাকোলাপাথাকাথিনতে কথা’-এর অডিশনের সময়ে তাঁকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ১৫ বছরের পুরনো ঘটনায় রাতারাতি নড়ে বসে চলচ্চিত্র জগৎ। রঞ্জিত পদত্যাগ করেন ‘কেরলা চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমি’ থেকে।
মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনেন শ্রীলেখা। ছবি: সংগৃহীত।