সরস্বতী পুজোর সাজসজ্জা থেকে পেটপুজোর জন্য এক জোড়া ‘ই-টেন্ডার’ বা ই-দরপত্র ডাকা হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে! ফাইল চিত্র।
ভোট যদি গণতন্ত্রের উৎসব হয়, ছাত্রভোট হল ছাত্রজনতার উৎসব। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে ভোট এবং পুজো, বিশেষত সরস্বতী পুজোর সম্পর্ক কী?
উত্তর খুঁজতে সরস্বতীর হাঁসও বোধ হয় ডানা চুলকোবে! উত্তরের অপেক্ষায় না-থেকে এ বার সরস্বতী পুজোর সাজসজ্জা থেকে পেটপুজোর জন্য এক জোড়া ‘ই-টেন্ডার’ বা ই-দরপত্র ডাকা হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে! শিক্ষা জগতের মতে, এই শতাব্দী-প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন বন্দোবস্ত এই প্রথম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর, ই-দরপত্র ছাড়া হয়েছে দু’দফায়। সরস্বতী পুজোয় ছাত্রছাত্রীরা খাবেন গোবিন্দ ভোগ চালের খিচুড়ি, আলুর দম, বেগুনি, পাঁপড় ভাজা, আমসত্ত্ব ও খেজুরের চাটনি, নলেন গুড়ের একটি রসগোল্লা। তার আয়োজন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি ই-দরপত্র ছেড়েছেন। কলেজ স্ট্রিট-সহ পাঁচটি ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ তৈরি, সাজসজ্জা, আলপনা দেওয়ার রং-তুলি জোগানোর জন্য আলাদা দরপত্র ডাকা হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা অভূতপূর্ব বলে জানাচ্ছে শিক্ষা শিবির থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়াকিবহাল মহল।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাতে সরস্বতী পুজোর দায়িত্ব না-ছেড়ে দরপত্র কেন? স্মরণাতীত কাল ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যাদেবীর আরাধনার আয়োজন করে এসেছে ছাত্র সংসদ। এটাই রীতি। কলেজেও তা-ই। কিন্তু ছ’বছর ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচনই হয়নি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই হাল রাজ্যের অন্য বহু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রশ্ন উঠছে কে করবে সরস্বতী পুজো? শিক্ষা সূত্রের খবর, গত বছর পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটা জোর করেই এক দল ছাত্রছাত্রী সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছেন। সম্প্রতি পড়ুয়াদের একাধিক গোষ্ঠী সরস্বতী পুজোর করার দাবি জানায়। কারা পুজো করবে, তার ফয়সালা হয়নি। তার পরেই কর্তৃপক্ষ দরপত্র ডেকে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন।
যখন বৈধ ছাত্র সংসদ ছিল, তখন কর্তৃপক্ষ পুজো করার জন্য অর্থ দিতেন সেই সংসদের পদাধিকারীদের। এ বার কারও হাতে টাকা না-দিয়ে পাঁচটি ক্যাম্পাসের সরস্বতী পুজো আয়োজনে রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাসের স্বাক্ষরিত দু’টি ই-দরপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। একটি দরপত্র পুজোর আয়োজনের জন্য, অন্যটি খাবারের। দরপত্রে বলা হয়েছে, কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ১০০০ জন, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে ৪০০, সল্টলেকের প্রযুক্তি ক্যাম্পাসে ৩০০, হাজরা আইন কলেজে ৩০০ এবং আলিপুর ক্যাম্পাসে ৫০০ জনপড়ুয়া খাবেন।
রেজিস্ট্রার শুক্রবার বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদ না-থাকায় সুষ্ঠু ভাবে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করতেই এই উদ্যোগ। কর্তৃপক্ষ অতীতে কখনও এমন ব্যবস্থা করেননি। পড়ুয়া-প্রতিনিধি বেছে দিতে বলা হয়েছে বিভাগীয় প্রধানদের। কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে বসে বাকি আয়োজন করবেন।’’
পুরোহিত ঠিক হবে কী ভাবে? রেজিস্ট্রার জানান, যাঁরা আগে সরস্বতী পুজোয় পৌরোহিত্য করেছেন, তাঁদের থেকেই হয়তো বেছে নেওয়া হবে।