রক্ত দিচ্ছেন মুর্শিদা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
রোজার উপবাস চলছে। সেই অবস্থাতেই ক্যানসার-আক্রান্ত রোগীকে রক্ত দিলেন এক নার্স। গত তিন দিন ধরে নানা ভাবে চেষ্টা করেও রক্ত জোগাড় করতে পারেননি ওই রোগীর পরিজনেরা। বিষয়টি জানার পর নার্স মুর্শিদা খাতুন নিজে থেকে এগিয়ে আসেন। রবিবার সকালে তেহট্টের মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে তিনি রোগীকে রক্ত দেন। তবে এখনও আরও এক বোতল রক্তের প্রয়োজন রয়েছে।
স্তন-ক্যানসারে আক্রান্ত তেহট্টের বক্সিপুরের বাসিন্দা বছর বাহাত্তরের কৃপাময়ী মণ্ডলের কেমোথেরাপি চলছে। ১৩ মার্চ তাঁকে কেমো দেওয়া হয়েছে। ৩০ মার্চ আবারও কেমো দেওয়া হবে। এরই মধ্যে তাঁর শরীরের রক্তের ঘাটতি দেখা যায়। চিকিৎসকেরা তাঁকে তিন বোতল রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন। রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃপাময়ীর রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। নদিয়ার কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কে এই গ্রুপের রক্ত না থাকায় সমস্যায় পড়েন তাঁর পরিজনেরা।
কৃপাময়ীর নাতি সুমন মণ্ডল বলেন, “অনেক খোঁজার পর জানতে পারি যে, বনগাঁ হাসপাতালে ঠাকুমার গ্রুপের এক বোতল রক্ত আছে। পরশু দিন সেই রক্ত নিয়ে এসে দেওয়া হয়। কিন্তু আরও দুই বোতল রক্তের প্রয়োজন ছিল। কোথাও ওই গ্রুপের রক্ত না পেয়ে রক্তদান সম্পর্কিত একটি গ্রুপের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরাই ওই নার্স রক্তদাতাকে জোগাড় করে দেন।”
রক্তদাতা বছর চব্বিশের মুর্শিদা খাতুন মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি কালীগঞ্জের পাগলাচণ্ডী এলাকায় এক বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসাবে কর্মরত। হাসপাতালেরই এক কর্মীর থেকে রক্তের প্রয়োজনের বিষয়টি জানতে পারেন মুর্শিদা। তখনই রক্ত দেওয়ার কথা মনস্থ করেন।
কিন্তু মুর্শিদা যে রোজা পালন করছেন! এই অবস্থায় খালি পেটে রক্ত দেওয়া কি ঠিক হবে? কেউ কেউ বিষয়টি জানার পর মুর্শিদাকে রক্তদানে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি পিছিয়ে যাননি। রবিবার সকালে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে এসে ওই রোগীকে রক্ত দিয়ে যান।
মুর্শিদা বলেন, “এক জন রোগী রক্তের অভাবে আরও মুমূর্ষু হয়ে পড়ছেন, সেটা জানার পরেও কী ভাবে চুপ করে থাকব? প্রয়োজন হলে আবারও একই কাজ করব!”