মেঘ-ঝড়-বজ্রের নাড়ি বুঝতে জব্বর রেডার

কে বোঝে মেঘের মর্জি! হয়তো বুঝতেন কালিদাস। কিছু কিছু বোঝেন অন্য কবিরাও। তবে যাঁরা বুঝলে মেঘের হামলা থেকে আম-আদমি মাথা বাঁচাতে পারে, সেই আবহবিজ্ঞানীরা আরও একটু বেশি করে বুঝতে চাইছেন মেঘের নাড়িনক্ষত্র।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০২
Share:

কে বোঝে মেঘের মর্জি! হয়তো বুঝতেন কালিদাস। কিছু কিছু বোঝেন অন্য কবিরাও।

Advertisement

তবে যাঁরা বুঝলে মেঘের হামলা থেকে আম-আদমি মাথা বাঁচাতে পারে, সেই আবহবিজ্ঞানীরা আরও একটু বেশি করে বুঝতে চাইছেন মেঘের নাড়িনক্ষত্র।

সেই বাড়তি অনুধাবন ইতিমধ্যে তাঁদের হাতের মুঠোয় বলে হাওয়া অফিসের কর্তাদের দাবি। কোথায় মেঘ থমকে দাঁড়িয়ে গেল, কোথায় ঠায় দাঁড়িয়ে সেই মেঘ আরও ঘনীভূত হতে শুরু করল— সবই ধরা পড়ছে তাঁদের যন্ত্রে। সেই অনুযায়ী এসএমএসে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে প্রশাসনকে: ‘প্রবল ঝড়বৃষ্টি আসছে। মানুষকে সতর্ক করে দিন।’

Advertisement

মেঘ যদি হয় মার্চ-এপ্রিল কিংবা মে মাসে, বদলে যায় সতর্কবার্তার ধরন। কারণ, এক জায়গায় মেঘ দাঁড়িয়ে যাওয়ার অর্থ, তার মধ্যে গিয়ে মিশছে আরও জলীয় বাষ্প। যন্ত্রে এই প্রাকৃতিক অবস্থা ধরা পড়ার পরে প্রশাসনের কাছে বার্তা গেল, আকাশভাঙা বৃষ্টি তো হবেই। সঙ্গে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইবে, আর বাজ পড়বে ঘনঘন। মানুষ যাতে খোলা জায়গায় না-থাকেন, সেই জন্যই এই সতর্কতা।

কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যু দিন দিন বাড়ার কারণ হল আগাম সতর্কবার্তা দিতে না-পারা। ক্ষণে ক্ষণে মেঘের মতি বদলের ফলে বিপদ বাড়ে। এত দিন অনেক সময়েই সেই বিপদ থেকে মানুষকে বাঁচানো যেত না। কারণ, মেঘের গতিপ্রকৃতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ার মতিগতি বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হতো না। উপগ্রহ-চিত্র দেখে মেঘের গতিপ্রকৃতি বিচার-বিবেচনা করে শেষ মুহূর্তে বিপদের একটা পূর্বাভাস দিতেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বিপত্তি এড়ানোর মতো বা বিপদ থেকে বাঁচার মতো সময় তখন থাকত না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।

আলিপুর হাওয়া অফিসের দাবি, এ বার এমন একটি রেডার তারা এনেছে, যা দিয়ে মেঘের গতিপ্রকৃতি আরও ভাল ভাবে বোঝা যাবে। আর সেই অনুসারে অনেক আগে পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করা যাবে মানুষকে।

মঙ্গলবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আন্তঃবিভাগীয় বৈঠকে এ কথা জানান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয় এবং সাধারণ মানুষকে, বিশেষত কৃষক ও মৎস্যজীবীদের আঞ্চলিক ভাষায় দ্রুত আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। মৎস্য, কৃষি ও আবহাওয়া দফতর এই বিষয়ে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা, হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের এসএমএস বিভিন্ন দফতরের কর্তারা পাওয়ার পরেই তা পাঠানো হবে দফতরের কর্মীদের কাছে। পূর্বাভাস নিয়ে জটিলতা এড়াতে সেই নির্দেশ আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করে ফের পাঠানো হবে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে।

উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে কী ভাবে একই সময়ে সব মৎস্যজীবীর কাছে সতর্কতাবার্তা পাঠানো যায়, সেই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়, ঝড় আছড়ে পড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে বিপদসঙ্কেত এবং ২৪ ঘণ্টা আগে সতর্কবার্তা পাঠানো হবে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কন্ট্রোল রুমে। সেই বিপদসঙ্কেত এবং সতর্কবার্তা প্রত্যেক মৎস্যজীবীর কাছে পাঠানোর জন্য তাঁদের ফোন নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। ওই দফতরের এক কর্তা জানান, ‘বাল্ক এসএমএস’ পাঠানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে পুরোদমে।

হাওয়া অফিসের অধিকর্তারা এ দিন সরকারি কর্তাদের অনুরোধ জানান, ওয়েবসাইটে নজর রাখলেও তাঁরা যেন সেই রিপোর্ট দেখে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্লেষণ না-করেন। ই-মেল কিংবা এসএমএসের মাধ্যমে যে-বার্তা হাওয়া অফিস থেকে পাঠানো হয়, শুধু সেগুলিই যেন সতর্কবার্তা হিসেবে সর্বস্তরে পৌঁছয়। তা হলে আর কোনও রকম বিভ্রান্তি ছড়াবে না।

‘‘প্রাযুক্তিক উন্নতি এবং সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয় থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা কমানো যায় এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সহজ হয়,’’ বলছেন আবহকর্তা সঞ্জীববাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement