Mohun Bagan

পাঁচ গোলের ম‍্যাচে হারতে হারতে জয় মোহনবাগানের, পিছিয়ে পড়েও কেরলকে হারাল সবুজ-মেরুন

কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে নামার আগে মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা জানিয়েছিলেন, দলে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। আর একটু হলেও আত্মতুষ্টি ডুবিয়ে দিচ্ছিল মোহনবাগানকে। তা হতে দিলেন না আলবের্তো রদ্রিগেস। সংযুক্তি সময়ে তাঁর গোলে কেরলের বিরুদ্ধে পিছিয়েও তিন পয়েন্ট পেল মোহনবাগান। মোহনবাগান জিতল ৩-২ গোলে।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:২৮
Share:

কেরলের বিরুদ্ধে গোলের পর ম্যাকলারেন। ছবি: সমাজমাধ্যম।

মোহনবাগান ৩ (ম্যাকলারেন, কামিংস, আলবের্তো)
কেরল ব্লাস্টার্স ২ (জিমেনেজ়, দ্রিনচিচ)

Advertisement

টানা তিন ম্যাচে জিতে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে নামার আগে মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা জানিয়েছিলেন, দলে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। আর একটু হলে সেই আত্মতুষ্টিই ডুবিয়ে দিচ্ছিল মোহনবাগানকে। তা হতে দিলেন না আলবের্তো রদ্রিগেস। সংযুক্তি সময়ে তাঁর গোলে কেরলের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও তিন পয়েন্ট পেল মোহনবাগান। জিতল ৩-২ গোলে। একক ভাবে উঠে গেল আইএসএলের শীর্ষে।

প্রথমার্ধে জেমি ম্যাকলারেনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরান হেসুস জিমেনেজ়। এর পর মিলোস দ্রিনচিচের গোলে এগিয়ে যায় কেরল। পরিবর্ত হিসাবে নামা জেসন কামিংস সমতা ফেরান। সংযুক্তি সময়ে দূরপাল্লার শটে গোল আলবের্তো রদ্রিগেসের।

Advertisement

বাঁচালেন, ডোবালেন বিশাল

একই ম্যাচে কী ভাবে নায়ক এবং খলনায়ক হওয়া যায় তা দেখিয়ে দিলেন বিশাল কাইথ। প্রথমার্ধে মোহনবাগানকে নিশ্চিত গোল হজম করার হাত থেকে বাঁচালেন। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর ভুলেই কেরলের দু’টি গোল হল। তবে দিনের শেষে তা ঢাকা পড়ে গিয়েছে তিন পয়েন্টে। কেরলের বিরুদ্ধে শুরুটা যে এ রকম হবে তা ভাবতেই পারেনি মোহনবাগান। মিকায়েল স্টাহরের দলের আক্রমণে ভেসে গিয়েছিল মোহনবাগানের রক্ষণ। সে সময় বিশাল না থাকলে নিশ্চিত ভাবে দু’টি গোল খাওয়ার কথা সবুজ-মেরুনের। আপুইয়ার ভুল পাস থেকে বক্সের বাইরে আচমকা বল পেয়ে গিয়েছিলেন নোয়া সাদাউই। দূর থেকে তাঁর নেওয়া শট আপুইয়ারই গায়ে লেগে গোলে ঢুকছিল। কোনও মতে লাফিয়ে ডান হাতে সেই বল বার করে দেন বিশাল। তার কয়েক মিনিট পরে সুযোগ তৈরি করেছিলেন নোয়া নিজেই। এ বার বাঁ দিক থেকে ভেতরে ঢুকে আসা পাস চকিতে ব্যাক হিল করেছিলেন জেসুস জিমেনেজ। ওই জায়গায় যে কোনও গোলকিপারের গোল খেয়ে যাওয়ার কথা। অসাধারণ রিফ্লেক্স থাকলে তবেই সেভ করা সম্ভব। সেটাই করলেন তিনি। বিশাল জাতীয় দলের প্রথম একাদশে না-ই খেলতে পারেন। তবে মোহনবাগানে তাঁর জায়গা নেওয়ার কেউ নেই। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধেও তাঁর দু’টি সেভ মোহনবাগানকে পতনের হাত থেকে বাঁচায়। কে জানত দ্বিতীয়ার্ধে ও ভাবে দু’টি ভুল করবেন তিনি। প্রথমে তিনি শুভাশিস বসুকে পাস দিতে গিয়ে ভুল করলেন। শুভাশিসকে বলে দেওয়া উচিত ছিল তাঁর সামনে বিপক্ষের ফুটবলার রয়েছেন। বাঙালি ফুটবলার চাপের মুখে বল হারালেন। সেই ভুলের সুযোগে গোল করেন জিমেনেজ়। কিছু ক্ষণ পরেই কর্নার থেকে বল তালুবন্দি করতে পারেননি বিশাল। মাটিতে পড়া বলে জোরালো শটে গোল করেন দ্রিনচিচ।

ম্যাকলারেনের প্রতিভা এবং সুরেশের ভুল

খেলার বিপরীতে গিয়ে প্রথমার্ধে গোল খেয়ে যায় কেরল। প্রথম ১৫ মিনিট মোহনবাগানের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল তারা। জেসুস এবং নোয়া মিলে মোহনবাগানের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন। সেই সময়ে একাধিক গোল তুলে নিতে পারত তারা। উল্টে গোল খেয়ে যায় গোলকিপার সচিন সুরেশের ভুলে। ম্যাকলারেনের পজিশনিং আইএসএলের বাকি স্ট্রাইকারদের তুলনায় অনেক ভাল। সেটা দেখা গিয়েছে আরও এক বার। লিস্টন কোলাসো, শুভাশিস ঘুরে ডান দিকে বল পেয়েছিলেন আশিস রাই। কিছুটা সাহসী হয়েই তিনি শট নিয়েছিলেন গোল লক্ষ্য করে। কেরল গোলকিপার সুরেশ তা হাত দিয়ে বাইরে বার করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি বলটি স্রেফ আটকালেন। সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন ম্যাকলারেন। বল জালে জড়ানোর জন্য তাঁকে ন্যুনতম পরিশ্রমও করতে হয়নি।

মোলিনার বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল

প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও কেরল চেপে ধরেছিল মোহনবাগানকে। তবে এ বার পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে চাপ বজায় রেখে দু’টি গোল তুলে নেয় তারা। ঘরের মাঠে মোহনবাগানের সামনে হার অপেক্ষা করছিল। এই সময়েই মোলিনা তাঁর আস্তিন থেকে আসল তাস বার করলেন। ম্যাকলারেনের পাশে নামিয়ে দিলেন কামিংসকে। লিস্টনকে তুলে নামালেন আশিককে। মোহনবাগানের সমতা ফেরানোর গোল এল এই দু’জনের পা থেকেই। আশিকের পাস থেকে শট নিয়েছিলেন পেত্রাতোস। তা শেষ মুহূর্তে কামিংসের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়। সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মোলিনার প্রশংসা প্রাপ্য। পিছিয়ে থাকা অবস্থায় রক্ষণের খেলোয়াড় তুলে নিয়ে ফরোয়ার্ড নামানো সহজ কাজ নয়। তিনি সেটাই করলেন। রক্ষণে তিন জনকে রাখলেন। তার একটু সামনে রাখলেন অনিরুদ্ধ থাপাকে। শেষ মুহূর্তে নাগাড়ে আক্রমণের জেরেই তিন পয়েন্ট পেল মোহনবাগান। দশ মিনিট খেলেই ম্যাচের সেরা ফুটবলার হয়ে গেলেন আশিক।

রক্ষণ নিয়ে মোলিনার ভাবনা

চাপে পড়লে মোহনবাগানও যে ঘাবড়ে যেতে পারে তা বোঝা গিয়েছে শনিবার। এই দল সব দিক থেকে নিখুঁত ফুটবল খেলছে। তবে রক্ষণ নিয়ে এখনও কাজ বাকি রয়েছে। নির্বাসন কাটিয়ে এই ম্যাচে ফিরেছিলেন শুভাশিস এবং আলবের্তো। রক্ষণ তাতে জমাট হবে বলে ভাবা হয়েছিল। তবে কেরলের চাপের মুখে প্রচুর ভুল করলেন রক্ষণ ভাগে খেলোয়াড়েরা। দুই উইং দিয়ে কেরলের আক্রমণ থামানোর মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। জিমেনেজ়, নোয়া, ফ্রেডিরা গতিতে মোহনবাগান ফুটবলারদের বার বার পরাস্ত করেছেন। প্রচুর মিস্‌ পাস করেছেন মোহনবাগানের ফুটবলারেরা।

হারলেও আগাগোড়া আগ্রাসী ফুটবল কেরলের

শেষ কোন দল মোহনবাগানকে এ ভাবে চাপে ফেলেছে তা নিয়ে ভাবতে হতে পারে। ফুটবলের তিন বিভাগেই সেরা ফুটবলার রয়েছে মোহনবাগানের কাছে। যে কোনও পজিশনেই কোচ মোলিনার হাতে একাধিক বিকল্প রয়েছে। তবে সেই দলও চাপে পড়ে গিয়েছিল কেরলের আগ্রাসী ফুটবলের সামনে। এই মোহনবাগানের সামনে যে কোনও দলই সাবধানী হয়ে নামে। তবে কেরলের এখন আর কিছু হারানোর নেই। তাই গোটা ম্যাচেই তারা আগ্রাসী খেলেছে। প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি। উল্টে হজম করতে হয়েছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তাদের খেলা মন কেড়েছে। ভাগ্য সহায় হলে এই ম্যাচ থেকে তাদের খালি হাতে ফেরার কথা নয়। দ্বিতীয় গোলের পর ভিআইপি গ্যালারির পাশে বেশ কিছু কেরল সমর্থক উল্লাস শুরু করেছিলেন। তবে ম্যাচের শেষে মুখ নিচু করেই বাড়ি ফিরতে হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement