ক্যাপশন- মাঠের ধারে সাফাই চলছে মকবুল হকের। ময়নাগুড়িতে।ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
এই মাঠেই পুজো হয়। আবার এই মাঠের এক প্রান্তে রয়েছে মন্দির। বর্ষায় ঘাস লক লক করে বেড়ে ওঠে। আকাশ শরৎ হলে সেই ঘাস কাটতে চলে আসেন মকবুল হক। মাঠ সাফ করেন। ছোট বেলগাছের চারদিকে বেড়া বেঁধে দেন। সেখানেই পুজোর বোধন হয়। গোবর লেপে সাফ করার পরে ধুইয়ে দেন মন্দির প্রাঙ্গণও। তার পরে শুরু হয় পুজো। মকবুলের বাড়ি থেকে পায়েস ভোগ না এলে সেখানে অষ্টমীর পুজো সম্পূর্ণ হয় না। দুধের জন্য টাকা নেন না মকবুল। গরু তো তাঁর বাড়ির। দুধের দামের কথা উঠলেই হাসিমুখে মকবুল বলেন, “পুজোটাও তো আমার!’’
এমনটাই চলে আসছে পঁচিশ বছর ধরে, জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে দুর্গাবাড়ির মাঠেই। সেখানে যেমন মন্দির আছে, তেমনই হয় সর্বজনীন পুজোও। ১৩১ বছরের পুরনো এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে অনেক স্মৃতি, কাহিনি। মকবুলও জড়িয়ে গিয়েছেন এই সব গল্পের সঙ্গে। পুজো কমিটির সম্পাদক প্রসেনজিৎ দে বলছেন, “মকবুল হককে সেই ছোট থেকে দেখছি। কবে পুজো শুরু, সে খবর নিজেই রাখে। নিজেই চলে আসে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও মকবুল ছাড়া কারও কথা ভাবতেই পারি না। মকবুল মন্দির ধুয়ে দেয়, তার পরেই পুজো শুরু হয়।”
দুর্গাবাড়ি এলাকার অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই ঘটনা দেখে আসছেন। কখনও কিছু মনে হয়নি তাঁদের। পাড়ারই এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, ‘‘এই সব নিয়ে ভাবনার কি চল ছিল নাকি আগে? এখন যেন মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ পুজো কমিটির লোকজন কিন্তু স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, ‘‘কাউকে কোনও দিন এ
সব প্রশ্ন তুলতেও দেব না। এটাই আমাদের ঐতিহ্য।’’
মকবুল পেশায় ভাগ চাষি। তবে পুজোর সময়ে সে সব শিকেয় তুলে চলে আসেন দুর্গাবাড়ির মাঠে। তাঁর কথায়, “পুজোর কাজ করতে আমাকে কেউ কোনও দিন না করেননি। করবেনই বা কেন? মারামারি তো মানুষে মানুষে হয়। ঠাকুর-আল্লার কোনও মারামারি নেই।”