বৌভাতের জন্য নির্দিষ্ট আয়োজন থেকেই ১৬টি পরিবারের দুপুরের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতীকী ছবি।
আচমকা অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই কয়েকটি বাড়ি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সব শেষ। প্রায় সর্বস্ব হারানো রহিমউদ্দিন, মহম্মদ খলিল, রফিকদের পরিবারের আশ্রয় তখন শীতের খোলা আকাশ। বেলা গড়ালেও ধ্বংসস্তূপের সামনে অসহায় ১৬টি পরিবার। সকাল থেকে সবাই অভুক্ত। শনিবার সকালে শিলিগুড়ির ধরমনগরে এই দুর্ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অন্য একটি বাড়িতে তখন চলছিল বৌভাতের রান্নাবান্নার আয়োজন। অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতির ব্যস্ততার মধ্যেই এলাকায় অঘটনের খবরে কিছুটা ভাবনায় পড়েন গুপ্ত পরিবার। যাঁর বিয়ের বৌভাতের আয়োজন, পরিবারের ছোট ছেলে সেই চক্রবর্তী গুপ্ত খবর পেয়েই ছোটেন দুর্ঘটনাস্থলে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির অবস্থা দেখে এর পরে আর দেরি করেননি। বৌভাতের জন্য নির্দিষ্ট আয়োজন থেকেই ওই ১৬টি পরিবারের দুপুরের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
চক্রবর্তী রবিবার জানালেন, বৌভাতের অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতির মধ্যে সকাল ৯টা নাগাদ পাড়ায় ওই দুর্ঘটনার খবর পান তিনি। তখন বৌভাতের রান্না কিছুটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া পরেই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে বৌভাতের জন্য এনে রাখা চাল-ডাল, আনাজ দিয়েই খিচুড়ি রান্নার বন্দোবস্ত করা হয় ওই ১৬টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য। দুপুরে প্রায় একশো জনকে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়।
এ দিন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে এখানে রয়েছি। শনিবার সকালে চারিদিকে চিৎকার শুনে বাড়ির বাইরে এসে দেখি পাড়ায় আগুন লেগেছে। সর্বস্ব পুড়ে যাওয়া পরিবারগুলির অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছিল। রান্নার জন্য চাল পর্যন্ত ছিল না ওঁদের কাছে। তাই অনুষ্ঠানের জন্য আনা চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে ওঁদের দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা গিয়েছে।’’ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক সদস্য রিনা বেগম জানান, ‘‘আগুনে পুরো বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। মানবিকতার স্বার্থে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। পাশের পাড়ায় বিয়ে ছিল। সেখান থেকেও খাবার দিয়ে গিয়েছে। সেই খাবার খেয়ে থেকেছি।’’
বিপদের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের দিকে এ ভাবে হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় গুপ্ত পরিবারের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সঞ্জয় পাঠক। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘যে ভাবে বিপদে একজন আর এক জনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা প্রশংসনীয়। অনেকেই পরিবারগুলিকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। আমাদের তরফেও সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।’’
এ দিন বিকেলে এলাকায় যান শহরের মেয়র গৌতম দেব। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ পুরসভার তরফে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মেয়র বলেন, ‘‘শনিবার দিনহাটায় ছিলাম। সেখান থেকেই খোঁজ নিয়েছি। সোমবার স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসব। পরিবারগুলির জন্য কী করা যেতে পারে তা দেখছি। জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলব।’’