প্রতীকী ছবি।
বাবা: মইদুল ইসলাম। মা: শর্বরী নট্ট। তাঁদের সদ্যোজাত পুত্রসন্তানের নাম: অভিযান। পদবি: নেই।
বাবা: রফিউদ্দিন আহমেদ। মা: শর্মিলা ঘোষ। মেয়ের নাম: প্রথম প্রতিশ্রুতি। পদবি: নেই।
বাবা: জিন্না আহমেদ। মা: পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছেলের নাম: নির্ঝর আলেখ্য। পদবি: নেই।
তালিকাটা বড় হচ্ছে ক্রমশ। ভিন্ ধর্মে বিয়ে হয়েছে, এমন অনেক দম্পতিই নিজেদের সন্তানের নামের পাশে পদবি জুড়ছেন না। তাঁরা চান, কোনও রকম ধর্মীয় পরিচয় ছাড়াই বড় হোক তাঁদের সন্তান। পদবি ছাড়াই বড় হচ্ছে নির্ঝর ও প্রথম প্রতিশ্রুতি। পদবি ছাড়াই বড় হবে অভিযান।
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা শর্মিলাদেবী জানান, স্কুলে মেয়ের পদবির জায়গায় লেখা ‘হিউম্যানিটি’। ‘‘ওটাই আমার মেয়ের ধর্ম। ভিন্ ধর্মে বিয়ে করায় অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করেছি আমরা,’’ বললেন ওই স্কুলশিক্ষিকা। একই বক্তব্য নির্ঝর ও অভিযানের মা-বাবার। ‘‘পদবিতে অনেকে ধর্মীয় পরিচয় খোঁজে। আমাদের সন্তানের কোনও ধর্ম-পরিচয় নেই,’’ বলছেন তাঁরা।
শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক জিন্না আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা বাড়িতে কোনও ধর্মীয় রীতি মানি না। পুজো বা নমাজ— কিছুই হয় না বাড়িতে। মানবিকতাকেই ধর্ম মেনেছি। ছেলেও তা-ই মেনে চলছে।’’ ওই শিক্ষকের দুই ভাইপো— রোদ্দুর ও দিগন্তের নামের পাশেও নেই পদবি। জিন্না বলেন, ‘‘আমার ভাইও ভিন্ ধর্মে বিয়ে করেছিলেন। আমার মতো ওঁরাও মনে করেন, তাঁদের সন্তানের কোনও ধর্ম নেই।’’
দক্ষিণ দিনাজপুরের দৌলতপুরের বাসিন্দা সুজাতা চক্রবর্তী এবং তাঁর স্বামী মুজফ্ফর রহমানও তাঁদের দুই সন্তান শমীক ও সাম্যের নামের পাশে পদবি জোড়েননি। মুজফ্ফরের কথায়, ‘‘মানবতাই আমাদের ধর্ম। তাই স্কুলের নথিতেও দুই সন্তানের পদবির জায়গায় লেখা রয়েছে মানবিকতা।’’
অভিযানের বয়স সাত দিন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার হেলিয়াগাছি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মইদুল বলেন, ‘‘আমার ছেলের কোনও ধর্ম-পরিচয় থাকবে না। বড় কঠিন সময়ে জন্মেছে ও।’’ শর্বরীদেবীর কথায়, ‘‘ধর্ম-পরিচয় আমাদের কাছে বড় নয়।’’ সেপ্টেম্বরে অভিযান ভূমিষ্ঠ হয়েছে কলকাতার এক হাসপাতালে।
অভিযানকে গর্ভে নিয়েই ১৭ জুন এসএসকে-এমএসকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিকাশ ভবন অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন শর্বরীদেবী। ৫ জুলাই ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিধানসভা অভিযানেও ছিলেন শর্বরীদেবী এবং মইদুল। ‘‘সন্তানকে পেটে নিয়েই বিকাশ ভবন অভিযানে গিয়েছি। অনশন করেছি। বিধাননগর থেকে বিধানসভা— সব অভিযানেই ছিলাম। তাই ছেলের নাম দিয়েছি অভিযান,’’ বললেন শর্বরীদেবী।
মইদুল বলেন, ‘‘ছেলের জন্মের শংসাপত্রে ওর পদবি কী লেখা হবে, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ তা জানতে চেয়েছিলেন। বলেছিলাম, পদবির জায়গা ফাঁকা থাকবে। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ রাজি হননি।’’ তার পরে মইদুল যোগাযোগ করেন সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে। ‘‘নামের পাশে পদবি রাখা বাধ্যতামূলক নয়। পরে শুনেছি, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষও তা নেমে নিয়েছেন,’’ বলেন বিকাশবাবু।