কর্মহীনতার পাশাপাশি গত অর্থবর্ষে সরকারি অর্থ বরাদ্দ ও খরচের মধ্যে ফারাকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উল্লেখ করেছে কমিটি। প্রতীকী ছবি।
কাজের খোঁজে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন সুন্দরবনের যুব সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ। এই তথ্য উঠে এসেছে রাজ্য বিধানসভার পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন এবং সুন্দরবন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির রিপোর্টেই। শাসক ও বিরোধী বিধায়কদের নিয়ে তৈরি এই কমিটির সুপারিশ, যুবকদের এই অংশের জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কাজের ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি, ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেটে সুন্দরবন উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত অর্থের অর্ধেকের কম দেওয়া হয়েছে বলেও ওই কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই স্থায়ী কমিটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন সম্পর্কে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে। ওই রিপোর্টে কর্মহীনতার পাশাপাশি গত অর্থবর্ষে সরকারি অর্থ বরাদ্দ ও খরচের মধ্যে ফারাকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উল্লেখ করেছে কমিটি। সেখানে বলা হয়েছে, মূল পরিকল্পনা খাতে অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকল্প নির্মাণ, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, বনসৃজন, মৎস্যচাষ, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা মূলক প্রকল্পে ৫৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু পাওয়া গিয়েছে ২০৬ কোটির সামান্য কিছু বেশি। চলতি অর্থবর্ষে এই ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ ৫৬০ কোটি টাকা।
কর্মসংস্থান নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিভিন্ন সময়ে এই প্রশ্নে রাজ্যের সাফল্যের কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, তৃণমূলের আমলে রাজ্যে কর্মসংস্থান প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। রাজ্যের পিছিয়ে থাকা অঞ্চল সুন্দরবন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবির বিপরীত তথ্যই ধরা পড়েছে কমিটির রিপোর্টে। সেখানে কমিটি জানিয়েছে, ‘এলাকার লোকজন বিশেষত যুব সম্প্রদায় কাজ পেতে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।’
চলতি বাজেট অধিবেশনে কমিটির এই রিপোর্ট গৃহীত হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব স্বাক্ষরিত ওই রিপোর্টে এই অন্যত্র চলে যাওয়া যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে পরামর্শ হিসেবে বলা হয়েছে, এঁদের সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রকল্প রূপায়ণে নিযুক্ত করা যেতে পারে। কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের শীর্ষস্থানীয় পদাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দেখা গিয়েছে, এই অংশের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য মূলত ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পেই ভরসা করছেন তাঁরা। ফলে কাজের খোঁজে বাইরে চলে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।’’
সুন্দরবন অঞ্চলের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বনসৃজন প্রকল্পগুলি স্থায়ী হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কমিটি। মাটি পরীক্ষার পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাস থেকে গাছ কী ভাবে বাঁচানো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।