— প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী পদে বেআইনি নিয়োগের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। কিন্তু তাদের বিভিন্ন হলফনামার তথ্য থেকেই ১০ হাজার ৭৫০ জনের বেআইনি নিয়োগের হিসাব সুপ্রিম কোর্টে পেশ করেছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীরা। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন যে এটি ‘আপাতত’ হিসাব। আদতে বেআইনি ভাবে কত জন নিযুক্ত হয়েছেন, সেই হিসাব এসএসসি-ই দিতে পারবে। প্রসঙ্গত, সোমবার শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেছেন বঞ্চিতদের আইনজীবীরা। আগামী শুনানিতে এসএসসি ও রাজ্যের জবাব দেওয়ার কথা। সে দিন রাজ্য এবং এসএসসি কী যুক্তি দেবে, সে দিকেই তাকিয়ে বঞ্চিত ও চাকরিরত—দু’পক্ষই।
বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ও বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এসএসসি হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক বার তথ্য দিয়েছে। শীর্ষ কোর্টে এসএসসি লিখিত ভাবে জানিয়েছে, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উত্তরপত্রে গরমিল আছে ৮০৮ জনের, নিয়োগ তালিকায় (প্যানেল) ক্রমপর্যায় টপকে (র্যাঙ্ক জাম্প) চাকরি পেয়েছেন ৭৪ জন, ওয়েটিং লিস্ট থেকে এবং প্যানেলের বাইরে চাকরি পেয়েছেন ১১১ জন। প্যানেলের মেয়াদ ফুরনোর পরে ১২৭ জন চাকরি পেয়েছেন। একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক পদে উত্তরপত্রে গরমিল আছে ৭৭২ জনের, প্যানেলের ক্রমপর্যায় টপকে চাকরি পেয়েছেন ২০ জন, ওয়েটিং লিস্ট থেকে ও প্যানেলের বাইরে চাকরি পেয়েছেন ১৮ জন। প্যানেলের মেয়াদ ফুরনোর পরে একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক পদে কত জন চাকরি পেয়েছেন, তা এখনও এসএসসি জানায়নি। গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মী পদে উত্তরপত্র গরমিল, প্যানেলের ক্রমপর্যায় টপকে, ওয়েটিং লিস্ট ও প্যানেলের বহির্ভূত প্রার্থী এবং মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল থেকে যথাক্রমে ৭৮২, ১৩২, ২৪৯ ও ৩৮১ জন চাকরি পেয়েছেন। গ্রুপ-ডি পদে উপরোক্ত নানা গরমিলে যথাক্রমে ১৯১১, ২৩৭, ৩৭১ ও ৬০৯ জন চাকরি পেয়েছেন।
এই হিসাবের বাইরেও আরও বেআইনি নিয়োগের তথ্য দিয়েছেন বঞ্চিতদের আইনজীবীরা। তাঁরা জানান, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক পদে ঘোষিত শূন্য পদ ছিল ১২৯০৫, এসএসসি নিয়োগের সুপারিশ করেছিল ১১৪২৫টি, কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগপত্র দিয়েছে ১৩০৫৬ জনকে। একই ভাবে একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষকের ক্ষেত্রে ঘোষিত শূন্যপদ ছিল ৫৭১২টি এবং এসএসসি সুপারিশ করেছিল ৫৫৫৭টি পদে, কিন্তু পর্ষদ নিয়োগপত্র দিয়েছে ৫৭৫৭টি। গ্রুপ-সি পদের ক্ষেত্রে ঘোষিত শূন্যপদ ছিল ২০৬৭ এবং এসএসসি সুপারিশ করেছিল ২০৩৭টি পদে। কিন্তু নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ২৪৮৪টি পদে। গ্রুপ-ডি পদে ঘোষিত শূন্যপদ ছিল ৩৯৫৬ এবং এসএসসি সুপারিশ করেছিল ৩৮৮১টি পদে। এ ক্ষেত্রে ৪৫৪৭টি নিয়োগপত্র দিয়েছে পর্ষদ। এই তথ্যের ভিত্তিতে আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তের বক্তব্য, “এসএসসি-র জমা দেওয়া তথ্য ঘেঁটেই এই হিসাব পাওয়া গিয়েছে। এর বাইরেও বেআইনি নিয়োগ থাকতে পারে। উত্তরপত্রের গোলমাল, র্যাঙ্ক জাম্প, ওয়েটিং লিস্ট থেকে এবং প্যানেলের বাইরে চাকরি, প্যানেলের মেয়াদ ফুরনো এবং শূন্যপদ, নিয়োগের সুপারিশ ও নিয়োগপত্র দেওয়া— সব মিলিয়ে আপাতত ১০৭৫০টি বেআইনি নিয়োগ চিহ্নিত করা গিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, এসএসসি কখনও নির্দিষ্ট করে বেআইনি নিয়োগের হিসাব দিচ্ছে না।”
এসএসসি-র একটি সূত্র অবশ্য এই হিসাবকে ‘পরিসংখ্যানগত’ ত্রুটি বলছে। ওই সূত্রের দাবি, বহু সময়ে কোনও চাকরিপ্রার্থীকে একটি নির্দিষ্ট স্কুলে সুপারিশ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে পর্ষদ নিয়োগপত্র দিয়েছে। তবে সেই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট স্কুলে যোগ দেননি। তারপরে এসএসসি সেই নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করলেও পর্ষদ বাতিল করেনি। আগের নিয়োগের সুপারিশপত্র বাতিল না করলে পরের কোনও প্রার্থীর জন্য ওই পদে নিয়োগের সুপারিশপত্র দেওয়া যেত না। যদিও বঞ্চিতদের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, এসএসসি-র মেমো অনুযায়ী পর্ষদ নিয়োগপত্র দিয়েছে। তাই একই নিয়মে পর্ষদেরও আগের নিয়োগপত্র বাতিল করে পরের প্রার্থীকে একই পদে নিয়োগপত্র দেওয়া উচিত। কিন্তু তা হয়নি কেন? সুদীপ্তর বক্তব্য, “২০১৬ সালের আগে স্কুল কমিটি শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগপত্র দিত। বর্তমানে উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষকদের নিয়োগপত্রও স্কুল কমিটি দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ভাবে বেআইনি নিয়োগ করার উদ্দেশ্যেই সে বার পর্ষদের হাতে নিয়োগপত্র দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এ কথা কোর্টেও জানিয়েছি।”