ফাইল চিত্র।
ভোট-বৈতরণী পেরোনোর তাগিদেই তৃণমূল সরকারকে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রভৃতির মতো কর্মসূচি আনতে হয়েছে বলে কটাক্ষ করে আসছে বিরোধী শিবির। বুধবার নবান্ন সভাঘরে বিশিষ্টজনদের সামনে ওই জোড়া কর্মসূচির ‘সাফল্য’ তুলে ধরতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে সরকার ভাল কাজ করে, সে অনেক সময়েই চিরস্থায়ী হয়ে যায়।’’ ভাল কাজের উপরে সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বলে মমতা যে-মন্তব্য করেছেন, সেটিকে ঘিরে জল্পনা বেড়েছে পর্যবেক্ষক মহলে।
বিশ্বব্যাঙ্ক, ইউনিসেফ ও বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সামনে মমতা জানান, এই সব কর্মসূচি মোটেই ভোটমুখী নয়। বরং এগুলি তাঁর সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ। প্রথম পর্যায়ে সরকার জেলায় জেলায় পৌঁছে গিয়ে সরাসরি কাজকর্মের তদারক করেছিল। মানুষের অভাব-অভিযোগ বুঝে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপভোক্তাদের কাছে পরিষেবা ঠিকঠাক পৌঁছচ্ছে কি না, তা দেখতেই দ্বিতীয় পর্যায়ে দুয়ারে সরকার ও পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ‘‘আগে ৫০০টা বৈঠক হয়েছে জেলায় জেলায়। এগুলো নির্বাচন আসছে বলে নয়। তৃণমূল স্তরে পরিষেবা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে সরকার। অনেকেই অনেক কিছু বলেন। তাঁরা জানেন না, বাস্তবে কী হচ্ছে,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন স্বাস্থ্যসাথীর সঙ্গে ফের কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্পের তুলনা টানেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, কেন্দ্রের প্রকল্পে সকলে সুবিধা পেতেন না। অথচ রাজ্যকে ৪০ ভাগ খরচ বহন করতে হত, কেন্দ্র দিত ৬০% টাকা। সেই জায়গায় একশো ভাগ খরচ করে রাজ্য সরকার প্রত্যেক নাগরিককে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় পরিবার-পিছু বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার সুবিধা দিচ্ছে। মমতা বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্য থেকেও অনেকে চিকিৎসা করাতে আসছেন। স্বাস্থ্যসাথী সকলের চিন্তা দূর করেছে।’’ সরকারি সূত্রের খবর, ‘চোখের আলো’ কর্মসূচিতে অন্তত এক লক্ষ মানুষের চোখ পরীক্ষা করে চশমা দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে এক কোটির বেশি মানুষকে নিযুক্ত করে ৩৬ কোটি কর্মদিবস তৈরি করা গিয়েছে। অন্তত ছ’লক্ষ ৪৬ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে ‘জব-কার্ড’ দিয়েছে রাজ্য। সড়ক পরিকাঠামো, আইনশৃঙ্খলা, পড়ুয়াদের বৃত্তি, জাতি শংসাপত্র-সহ সব বিষয়েই সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন মমতা।
মানুষের সমস্যা মেটাতে রাজ্যের বিভিন্ন কর্মসূচি বিশ্বব্যাঙ্কের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর জুনেইদ কামাল আহমেদের বক্তব্য, আধুনিক সময়ে সরকারকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। পশ্চিমবঙ্গ সেটাই করেছে। ইউনিসেফের প্রতিনিধি ইয়াসমিন আলি হকের বক্তব্য, বার্ধক্য ভাতা পরিবারগুলিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্বাস্থ্যসাথী, শিক্ষাশ্রী শিশুদের বিকাশে সহায়ক হয়েছে।