টাইগার।—নিজস্ব চিত্র।
দার্জিলিং, সোনাদা, ঘুম জুড়ে এখন চিতাবাঘ নয়, আলোচনা হচ্ছে ‘টাইগার’কে নিয়ে। রাতারাতি বাঘের মর্যাদা পেতে শুরু করেছে পাহাড়ি কুকুরটি। অনেকেই তাকে বাড়ি বসে এসে দেখা যাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘টাইগার আদতে রয়্যাল বেঙ্গলই। নইলে ছোট্ট পাহাড়ি কুকুর, কী সাহস নিয়ে চিতাবাঘটাকে আক্রমণ করল!’’ টাইগারের অবশ্য ‘ভিআইপি’ হয়েও হেলদোল নেই। সে ঘুরছে স্মৃতিদের পায়ে পায়ে।
বুধবার তখন রাত ১০টা। দার্জিলিং লাগোয়া সোনাদার নয়াগাঁও এলাকায় তাতেই সব নিঝুম। পাহাড়ি গাঁ-গঞ্জের পক্ষে একটু বেশি রাতই। খাওয়াদাওয়া সেরে মেয়ে স্মৃতিকে নিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন ৫৮ বছরের অরুণা লামা। হঠাৎ মুরগির ঘর থেকে ডাক আর ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ আসতে থাকে।
‘‘মুরগির খামারটা আমাদের বাড়ি লাগোয়া একটা পুরনো গ্যারাজে। মা উঠে দেখতে যান, কী হচ্ছে সেখানে। আমাদের কুকুর টাইগারকে নিয়ে আমি তখন ঘরেই ছিলাম,’’ বলেন স্মৃতি।
জখম: অরুণা লামা।—নিজস্ব চিত্র।
গ্যারাজে গিয়ে অরুণা দেখেন, ভিতরে জ্বলজ্বল করছে এক জোড়া চোখ। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন গন্ধগোকুল জাতীয় কোনও প্রাণী এসেছে মুরগি ধরতে। একটু এগিয়ে যেতেই ঘটল মহা বিপত্তি। অন্ধকারের ভিতর থেকে লাফিয়ে তাঁর ঘাড়ে এসে পড়ল একটি চিতাবাঘ!
স্মৃতি ঘরে বসেই মায়ের চিৎকার শুনতে পান। বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি, মেঝে থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে টাইগার। তার পরে আমি দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার মধ্য সে তীব্র গতিতে ছুটে গেল গ্যারাজের দিকে।’’
স্মৃতি তখন লাঠির মতো হাতিয়ার খুঁজছিলেন। তার মধ্যে টাইগার গিয়ে হাজির হয় গ্যারাজে। সেখানে তখন আধো আলো, আধো অন্ধকারে অরুণার সঙ্গে চিতাবাঘের খণ্ডযুদ্ধ চলছে। চিতাবাঘের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন অরুণা। এক হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন। এই সময়ে অসম সাহসী সেই পাহাড়ি কুকুর চিৎকার করে ঝাঁপিয়ে পড়ল চিতাবাঘের উপরে।
স্মৃতির কথায়, ‘‘কী করব ভাবতে ভাবতে দেখি, টাইগারের আচমকা হামলায় চিতাবাঘটা পিছু হটেছে কিছুটা। টাইগার তখন অনর্গল চেঁচিয়ে যাচ্ছে। আমরাও চিৎকার করতে শুরু করে। সেই শুনে চিতাবাঘটা প্রথমে পিছিয়ে যায়। তার পরে লেজ গুটিয়ে পালায়। টাইগার তখন কিছু দূর পর্যন্ত তাড়া করে যায়। তার পরে চিতাবাঘ ঝোপে লুকোতে টাইগার ফিরে আসে মায়ের কাছে। আমাদের চিৎকারে ততক্ষণে লোকজন বেরিয়ে এসেছে।’’
অরুণাকে রাতেই প্রথমে সোনাদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর কপালের ডান দিকে ২০টি, ডান কানে ৪টি সেলাই পড়েছে। তবে অবস্থা স্থিতিশীল। বৃহস্পতিবার বন দফতরের অফিসারেরা অরুণাকে হাসপাতালে দেখতে যান। এলাকায় গিয়ে চিতাবাঘের পায়ের ছাপও পান তাঁরা। শুক্রবার সকালে এলাকায় খাঁচা পাতা হয়েছে। দার্জিলিং বন্যপ্রাণ শাখার ডিএফও জিজু জায়েসপার বলেন, ‘‘এলাকায় খাঁচা পেতে নজর রাখা হচ্ছে।’’
দার্জিলিং পাহাড়ে চিতাবাঘের হানা নতুন ঘটনা নয়। বছর পাঁচেক আগে দার্জিলিং শহরে এক ব্যক্তির বাড়ির গ্যারাজে চিতাবাঘ ঢুকে বসেছিল। গাড়ি রাখতে গিয়ে তিনি তা টের পান। জখমও হন। পরে বনকর্মীরা সেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। গত জানুয়ারি মাসে হ্যাপিভ্যালি চা বাগানের বস্তি থেকে পোষ্যদের গায়েব হওয়ার পর খাঁচা পাতে বন দফতর।