প্রতীকী ছবি।
মা বার-ডান্সার, যৌনকর্মীও। তাঁর শিশুপুত্রের কী ভবিষ্যৎ?
এই প্রশ্নেই ক’দিন ধরে উদ্বেগে ছিল হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ। তাদের মনে হয়েছিল, দু’বছরের শিশুটিকে তার মায়ের কাছে রাখা নিরাপদ নয়। তাই দ্বারস্থ হয়েছিল আদালতের। পুলিশের আবেদন মেনে শুক্রবার উলুবেড়িয়া আদালত শিশুটিকে আপাতত তার দিদিমার হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল।
এখানেই শেষ নয়। শিশুটির মাকে সুস্থ সামাজিক জীবন বেছে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আদালত। সেটা তিনি করেন কিনা, সে বিষয়ে পুলিশকে নিয়মিত রিপোর্ট দিতেও বলা হয়েছে। তার উপরে ভিত্তি করেই এর পরে শিশুটিকে মায়ের কাছে ফেরত দেওয়া হবে কিনা, তা ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক। এ দিন শিশুটির মা, হাওড়ার শ্যামপুরের ডিহিমণ্ডলঘাটের বছর পঁচিশের ওই যুবতী আদালতে গোপন জবানবন্দিও দেন।
রায় শুনে মহিলা বলেন, ‘‘আমি পুরনো জীবনে ফিরতে চাই না। ছেলেকে মানুষ করার জন্যই মুম্বই গিয়েছিলাম। ছেলেকে ছেড়ে থাকত পারব না। এখানেই কিছু একটা করার চেষ্টা করব।’’ হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘শিশুটির জন্য আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। আদালতের নির্দেশমতো যা করার শিশুটির জন্যই করছি।’’
আরও পড়ুন: শিক্ষাঙ্গনে এমন হলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যত্ কী? প্রশ্ন অভিভাবকদের
গত ৭ মে ওই মহিলা ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তাঁর মা ১৪ জুন পুলিশের কাছে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, মহিলা মুম্বইয়ের নেরুলা থানা এলাকায় বার-ডান্সারের কাজ করেন। একই সঙ্গে তিনি পেশায় যৌনকর্মীও। বুধবার রাতে ওই মহিলা ও তাঁর শিশুপুত্রকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশকে ওই যুবতী জানিয়েছেন, আর্থিক অনটন এবং স্বামীর অত্যাচারে ঘর ছেড়ে তিনি স্বেচ্ছায় মুম্বই গিয়ে ওই পেশা বেছে নেন। প্রেম করে বিয়ে করায় বাপের বাড়ির লোকজনও তাঁর প্রতি বিরূপ ছিলেন। নিজের মোবাইল বিক্রির পাঁচ হাজার টাকায় তিনি মুম্বই গিয়ে প্রথমে শাঁখা তৈরির কাজ করলেও খরচ কুলোতে পারছিলেন না। তাই ওই পেশায় নামেন।
পুলিশকর্তারা তাঁকে শ্যামপুরে থেকে ব্যবসা বা চাকরি করে সুস্থ সামাজিক জীবন যাপনের পরামর্শ দেন। পুলিশের দাবি, ওই মহিলা দু’রকম শর্ত দেন। ১) তিনি যদি এখানে ঠিকমতো উপার্জন করতে পারেন, তা হলে আর মুম্বই যাবেন না। ২) এখানে সুবিধা না হলে তিনি মুম্বইয়ে পুরনো পেশাতেই ফিরে যাবেন।
এতেই উদ্বেগ বাড়ে পুলিশের। তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু এর আগেও তো পুলিশ ভিন্ রাজ্যে পাচার হয়ে যাওয়া বহু মহিলাকে উদ্ধার করেছে। ডোমজুড়ের যৌনপল্লিতেও অনেক শিশু রয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে কেন পুলিশের এমন উদ্যোগ দেখা যায় না?
পুলিশের দাবি, এর আগে যে সব মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে শিশুসন্তান ছিল না। আর যৌনপল্লিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করে। কিন্তু শ্যামপুরের ওই যুবতী মুম্বইয়ে একাই ছিলেন। ওই পরিবেশে থাকলে শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা ছিল। তাই এই উদ্যোগ।