চাকরি নিয়ে ফের আশঙ্কায় প্রার্থীরা। ফাইল চিত্র।
যেন পা ফেললেই বিপদ! কোনটা করা উচিত, কোনটা অনুচিত তা বুঝে উঠতেই পারছে না প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ! স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরে তাদের এমনই অবস্থা বলে মনে করছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করল কলকাতা হাই কোর্টও। বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এখন তো দেখা যাচ্ছে বার বার সমস্যার মুখে পড়ছে পর্ষদ। কোনও পদক্ষেপ করলেই মামলা হচ্ছে।’’ পর্ষদের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয় উচ্চ আদালতে। বৃহস্পতিবার এই মামলায় কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেয়নি হাই কোর্ট। আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদ। সেখানে বলা হয়, ডিএলএড (ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন)-এর পাশাপাশি বিএড (ব্যাচেলর অব এডুকেশন) যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। যা নিয়ে আপত্তি তুলে হাই কোর্টে মামলা করেন সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েক জন টেট পরীক্ষার্থী। তাঁদের মতে, ডিএলএড ডিগ্রি শুধুমাত্র টেট পরীক্ষার জন্য কাজে লাগে। আর বিএড প্রয়োজন হয় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের যে কোনও পরীক্ষায়। অর্থাৎ, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের জন্য দরকার ডিএলএড ডিগ্রি। আর উচ্চ প্রাথমিক (ব্যতিক্রম স্নাতক ডিএলএড), মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রয়োজন বিএড ডিগ্রি। মামলাকারীদের বক্তব্য, প্রাথমিক স্কুলের পরীক্ষায় যদি বিএড-রা ঢুকে যায় তবে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। আর বঞ্চিত হবেন ডিএলএড ডিগ্রিধারীরা। কারণ, এই যোগ্যতা নিয়ে অন্য কোথায় আবেদন করা যায় না। ফলে ডিএলএড-রাই শুধু টেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন— এই নির্দেশ দিক আদালত।
হাই কোর্টে পর্ষদের আইনজীবী সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল, ‘‘২০১৮ সালের ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত সব প্রার্থীরা টেট পরীক্ষায় বসতে পারবেন। অর্থাৎ, এনসিটি-ই প্রাথমিকের চাকরিতে বিএড-দের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছে। তারা নিয়ামক সংস্থা। তাদের নিয়ম মেনে আমরা পরীক্ষা নিতে বাধ্য।’’ আর মামলাকারীদের আইনজীবী সোমেশকুমার ঘোষ এবং সুরজিৎ নাথ মিত্রের বক্তব্য, ‘‘রাজস্থান হাই কোর্ট এনসিটি-র ওই নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ জারি করে। আদালতের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সরকার। মামলাটি এখন সেখানে বিচারাধীন রয়েছে।’’ তাঁদের যুক্তি, এনসিটি যে হেতু একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা। ফলে তাদের কোনও সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ হলে তা গোটা দেশের জন্যই কার্যকর হওয়া উচিত। ফলে এ রাজ্যেরও রাজস্থান হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা উচিত ছিল।
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের ফলে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় নতুন নিয়োগ করে ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা কাজে লাগছে না। ফের টেট বিজ্ঞপ্তি ঘিরে জট তৈরি হয়েছে। অবাধে নিয়োগ করতে সরকারকে সেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আদালতের নির্দেশের দিকে। যদিও বৃহস্পতিবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেনি হাই কোর্ট। তবুও ঘটনাক্রমে দেখে অনেকে মনে করছেন, পর্ষদের প্রায় সব পদক্ষেপই এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তা নির্ণয় করা অসাধ্য হয়ে উঠছে পর্ষদের পক্ষে। পর্ষদের যে কোনও নতুন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এ নিয়ে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন,‘‘আসলে সরকারই জট তৈরি করছে। এর আগে তারা কোনও সুষ্ঠু নিয়োগ করতে পারেনি। ২০১২ সালের পর থেকে সব টেট পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং মামলা হয়েছে। সরকারের নিজের নীতি ঠিক করা প্রয়োজন।’’