বাইরে থেকে কনভয়ে ঢুকে পড়া সেই গাড়িকে সরানোর চেষ্টা চলছে তখন। বৃহস্পতিবার। বসিরহাট রেলগেটের কাছে। ছবি: সংগৃহীত।
আদালত থেকে পুলিশের গাড়িতে ফেরার সময় আচমকাই ‘উধাও’ হয়ে গেলেন শাহজাহান শেখ! বৃহস্পতিবার সকালে বসিরহাট আদালত থেকে শাহজাহানকে নিয়ে বের হয় ৭-৮টি গাড়ির কনভয়। কিন্তু দু’ কিলোমিটার রাস্তা পেরনোর পর আচমকাই শাহজাহানকে নিয়ে বেরনো পুলিশের গাড়ির কনভয়ের মাঝখানে ঢুকে পড়ে একটি গাড়ি। পুলিশ সেই গাড়িকে সরানোর আগেই শাহজাহানকে নিয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায় পুলিশের কনভয়ের তিনটি গাড়ি।
কী ভাবে ঘটল ঘটনা?
শাহজাহানকে গ্রেফতারির শুরু থেকেই চূড়ান্ত গোপনীয়তা নিয়েছে পুলিশ। প্রথমত, গ্রেফতারির পর শাহজাহানকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। ভোর বেলায় সরাসরি বসিরহাটের কোর্ট লক আপে এনেছে পুলিশ। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া পর্যন্ত সেখানেই বসিয়ে রেখেছিল তাঁকে। সেই সঙ্গে গোটা এলাকাটিই ঘিরে রেখেছিল র্যাফ এবং পুলিশবাহিনী। কারণ শাহজাহান গ্রেফতারির খবর পাওয়ার পরই এলাকায় ভিড় করেছিল প্রচুর মানুষ। হাজির হয়েছিল সংবাদ মাধ্যম।
অন্য দিকে, শাহজাহানের গ্রেফতারির খবর দিয়ে যে সাংবাদিক বৈঠকটি করেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার, সেটি তিনি বসিরহাটে করেননি। বদলে করেছেন মিনাখাঁয়।
এদিকে শাহজাহানের শুনানি ১২টা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা আচমকাই দু’ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে শুনানি শুরু করে তার পরে শেষও করে শাহজাহানকে নিয়ে বেরিয়ে আসে পুলিশ। আদালত সূত্রে খবর শাহজাহানের ১৪ দিনের হেফাজত চেয়েছিল পুলিশ। বদলে তাঁকে ১০ দিনের হেফাজত দেয় আদালত।
বাইরে কনভয় প্রস্তুত ছিলই। কয়েক মিনিটের শুনানি শেষ করেই শাহজাহানকে নিয়ে কনভয়ের দিকে এগিয়ে আসে পুলিশ। দ্রুত সন্দেশখালির শেখকে নিয়ে রওনা হয় পুলিশের কনভয়।
কনভয়ের গাড়ি সাজানো হয়েছিল কিছুটা এ ভাবে। শাহজাহানের গাড়ির আগে এবং পরে দু’টি করে গাড়ি। তার পরে বাকি গাড়ি। এবং এই গোটা কনভয়ের পিছনে আসছিল সংবাদমাধ্যমের গাড়ি গুলিও। যাতে তারা জানতে পারে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শাহজাহানকে।
বসিরহাট আদালত থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে যখন শাহজাহানকে নিয়ে পুলিশের গাড়ির কনভয় বসিরহাট রেলগেটের কাছে তখনই আচমকা একটি অন্য গাড়ি ঢুকে পড়ে কনভয়ের মাঝখানে। ফলে শাহজাহান-সহ পুলিশর তিনটি গাড়ি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাকি কনভয়ের থেকে। পুলিশ যখন গাড়ি থেকে নেমে কনভয়ে ঢুকে পড়া গাড়িটিকে সরাতে ব্যস্ত, তত ক্ষণে ৫-৭ মিনিট কেটে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এই সময়েই শাহজাহানকে নিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি বেরিয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমের চোখের আড়ালে চলে যান শাহজাহান। ফলে তাঁকে এর পরে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু কেন শাহাজাহানকে চোখের আড়ালে নিয়ে যাবে পুলিশ?
অনুমান করা হচ্ছে, শাহজাহানকে কোথায় রাখা হচ্ছে তা জানতে দিতে চাইছে না পুলিশ। প্রথমত, শাহজাহানকে ঘিরে জনরোষের আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে শাহজাহানকে সামলাতে বসিরহাট আদালতে যেমন বড় সংখ্যক পুলিশবাহিনী এবং র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছে, ঠিক ততটাই বা তার বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে শাহাজাহানকে যেখানে রাখা হবে সেখানেও। একদিকে শাহজাহানকে নিয়ে সন্দেশখালিতে অশান্তি চলছে। এই আবহে আরও একটি জায়গায় যদি পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়, তবে সন্দেশখালি এলাকা রক্ষীহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকবে।
দ্বিতীয়ত, শাহজাহানকে কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে পারলে সেখানে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। শাহজাহানকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছে, বাড়ির কেউ দেখা করতে আসছে কি না, এই সমস্ত জানার চেষ্টা করবে তারা। যেহেতু শাহজাহানকে নিয়ে পুলিশ গোপনীয়তা রাখার চেষ্টা করছে, হয়তো সে জন্যই আরও শাহজাহানকে ‘আড়াল’ করা হল বলে মনে করা হচ্ছে।