ধৃত ন’জনকে আলিপুর আদালতে হাজির করানোর সময় বিক্ষোভ আন্দোলনকারীদের। ছবি: সংগৃহীত।
ত্রিধারায় ধৃত ৯ জনকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠাল আলিপুর আদালত।
আদালতে পুলিশ দাবি করেছে, ধৃতদের হোয়াটস্অ্যাপ চ্যাটে দেখা গিয়েছে। তাঁরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ওটা করেছেন। তাঁরা জামিন পেলে অন্য পুজো মণ্ডপেও একই ধরনের ঘটনা ঘটবে।
আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, রবীন্দ্র সরোবর এলাকার বাসিন্দা বিট্টু কুমার ঝার অভিযোগের ভিত্তিতে ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন— আসানসোলের কুলটির বাসিন্দা সুজয় মন্ডল (২০), দমদমের উত্তরণ সাহা রায় (১৮), ট্যাংরার কুশল কর (২৭), নরেন্দ্রপুরের জহর সরকার (২৯) এবং সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় (২৬), পূর্ব বর্ধমানের নাদিম হাজারি (২০), হাসনাবাদের ঋতব্রত মল্লিক (২০), খড়দহের চন্দ্রচূড় চৌধুরী (২০), রহড়ার দৃপ্তমান ঘোষ (২০)।
পাল্টা সরকারি আইনজীবীর সওয়াল, পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এক জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এফআইআর করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ত্রিধারা সম্মেলনী একটি পুজো মণ্ডপ। সেখানে প্রচুর ভিড় হয়। ওটা কি প্রতিবাদের জায়গা? ওই ভিড়ের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে গেল কী হবে? তার দায় কে নেবে? প্রতিবাদ নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। প্রতিবাদের স্থান নিয়ে আপত্তি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কি ওই জায়গায় গিয়ে প্রতিবাদ করতে বলেছে? যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরা কেউ ডাক্তার নন।
ধৃত ন’জনকে ১২ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে পুলিশ। অন্য দিকে, ডাক্তারদের আইনজীবীর বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পুলিশ আটক করে। রাত ১১:৩৫ মিনিটে এফআইআর করা হয়। এর নেপথ্যে অভিসন্ধি কাজ করেছে। কারণ, এফআইআর দায়ের করার আগে স্বাস্থ্য ভবনে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যসচিবের বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকে ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণেই এফআইআর করে গ্রেফতার করা হয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা যাবে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে।
ত্রিধারা সম্মিলনীতে স্লোগান দিয়ে গ্রেফতার হওয়া সেই ন’জনকে বৃহস্পতিবার বিকেলে হাজির করানো হল আলিপুর আদালতে। আন্দোলনকারীরাও জড়ো হয়েছেন আদালতের সামনে। সেখানেও চলছে বিক্ষোভ।
ন’জনকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে রাতেই মিছিল করে লালবাজারে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একটি দল। তাঁদের আটকাতে ঘিরে ফেলা হয় লালবাজার। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে বসানো হয় ব্যারিকেড। আন্দোলনকারীরা যাতে কোনও মতেই লালবাজারের আশপাশে না আসতে পারেন, সেই জন্য রাস্তায় খালি বাস দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ব্যারিকেডের সামনেই বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা দিতে থাকেন স্লোগান। রাতভর সেখানে অবস্থান বিক্ষোভ চলে।
বুধবার ‘অভয়া পরিক্রমা’ কর্মসূচি ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। মিনিডোরে করে আরজি কর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার নির্যাতিতার ‘প্রতীকী মূর্তি’ নিয়ে পুজোমণ্ডপে ঘুরবেন তাঁরা। সেই কর্মসূচি পালন করতে ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। ঘটনাচক্রে, ওই পুজো তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমারের বলেই পরিচিত। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে ‘বিচার চাই’ স্লোগান তোলেন তাঁরা। এর পরেই সেখান থেকে ন’জনকে আটক করে কলকাতা পুলিশ। তাঁদের লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানা যায়, তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।