মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তৃণমূল আর জাতীয় দল নয়। সোমবার সেই ঘোষণা করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। যদিও বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আইনি পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে তৃণমূল। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী জাতীয় দল হতে গেলে তিনটি শর্তের অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। এক, লোকসভায় অন্তত চারটি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। দুই, লোকসভায় ৩টি রাজ্য থেকে অন্তত ১১টি আসন (মোট আসনের ২ শতাংশ) জিততে হবে এবং আগের জেতা আসনের অন্তত চারটি পুনরায় জিততে হবে। তিন, অন্তত চারটি রাজ্যে ‘রাজ্য দলের’ তকমা পেতে হবে।
এর মধ্যে একটি শর্ত ২০১৬ সালেই পূরণ করে দিয়েছিল তৃণমূল। দ্বিতীয় বার বাংলার ক্ষমতায় আসার পরেই জাতীয় দলের স্বীকৃতি মিলেছিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মনিপুর প্রদেশে রাজ্য পর্যায়ের দল হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় তৃণমূলকে জাতীয় দলের মর্যাদা দিয়েছিল কমিশন। সে সময় লোকসভা ভোটে ৪টি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ‘রাজ্য দল’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কিন্তু বাংলায় শক্তি বাড়াতে পারলেও সেই শর্ত পূরণ হচ্ছে না এখন। ফলে জাতীয় দলের তকমা রইল না।
২০১৬ সালে জাতীয় দলের তকমা পায় তৃণমূল। তখনও পর্যন্ত নিয়ম ছিল প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কারা তকমা পাবে আর কারা পাবে না, তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই বছরেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন ঠিক করে পাঁচ বছর নয়, প্রতি দশ বছর অন্তর এই তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেই হিসাবে ২০৩৩ সালের আগে কোনও শর্তপূরণ করতে পারলেও তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা ফেরার কথা নয়। জাতীয় দলের মর্যাদা হারালে কোনও দল কয়েকটি সুবিধা পায় না। ফলে সেগুলি আপাতত মিলবে না তৃণমূলের।
১। জাতীয় দলের মর্যাদা যাদের রয়েছে সেই দলের নির্বাচনী প্রতীক দেশের কোথাও কোনও দল ব্যবহার করতে পারে না। তবে তৃণমূলের যে হেতু দু’টি রাজ্যে (পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়) প্রাদেশিক দলের মর্যাদা রয়েছে তাই সেই সুবিধা থাকবে। কিন্তু এই দুই রাজ্যের বাইরে তৃণমূলকে লড়তে হলে নিজস্ব প্রতীক নাও মিলতে পারে।
২। জাতীয় দলের প্রার্থীরা ভোটে দাঁড়ানোর সময় মনোনয়নে এক জন প্রস্তাবক লাগে। সেই সুবিধা হারাবে তৃণমূল। তবে পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়ে রাজ্য দল থাকায় সেখানে এই সুবিধা মিলবে। অন্য রাজ্যে নয়।
৩। ভোটের সময়ে জাতীয় দলের গোটা দেশেই ভোটার লিস্টের দু’টি কপি বিনামূল্যে দেয় নির্বাচন কমিশন। সেই সুবিধাও শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ে পাবে তৃণমূল।
৪। রাজধানী দিল্লিতে জাতীয় দল জমি বা বাড়ি পায় দলীয় দফতর বানানোর জন্য। সেই সুবিধা আর থাকবে না তৃণমূলের।
৫। যে কোনও নির্বাচনের সময়ে জাতীয় দল ৪০ জন তারকা প্রচারক রাখতে পারে। গত ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও তৃণমূল সেই সুবিধা পেয়েছিল। কিন্তু তা আর মিলবে না। এখন সর্বোচ্চ ২০ জন তারকা প্রচারক রাখা যাবে।
৬। কোনও রাজ্যে নির্বাচনে প্রচার করতে বাংলা থেকে তৃণমূল নেতারা গেলে ৪০ জনের খরচ দলের হত। কিন্তু এখন আর সেটা থাকবে না। ২০ জনের বেশি কেউ প্রচার করতে গেলে তাঁর যাতায়াত-সহ অন্যান্য খরচ সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনী খরচের সঙ্গে যুক্ত হবে।
৭। জাতীয় দলের ভোট প্রচারের জন্য সরকারি টিভি ও রেডিয়োতে বিনা খরচে সময় দেওয়া হয় নির্বাচনের সময়। সেই সুবিধাও হারাতে হবে তৃণমূলকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে পাঁচের পরিবর্তে প্রতি দশ বছর অন্তর জাতীয় দলের নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়ে সে বছরের অগস্ট মাসে। আর তৃণমূল জাতীয় দলের তকমা পায় সেপ্টেম্বর মাসে। সেই হিসাবে ২০২৬ সালে পরবর্তী তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা ২০২৩ সালের এপ্রিলেই প্রকাশিত হল। অনেকেই এমন প্রশ্ন তুলছে যে, তৃণমূলের নাম কি পরিবর্তন হবে? দলের আসল নাম ‘অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস’। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম বলছে, জাতীয় দলের তকমা থাকা বা না থাকায় নামে কোনও বদল আসে না।