নিয়োগ নিয়ে অজস্র মামলার মধ্যে একটিকে ঘিরে টেট-সমস্যা আবার পাকিয়ে উঠছে। তবে তার মধ্যেই নিয়োগ পর্ব এগিয়ে নিয়ে যেতে কোমর বাঁধছে রাজ্য।
প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার চূড়ান্ত করে কলকাতা হাইকোর্ট বুধবার রায় দেওয়ার সময়েই বলেছে, ওই প্রার্থীদের নিয়োগের পরে পদ খালি থাকলে নিতে হবে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদেরও। সেই রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য সরকার বৃহস্পতিবার জানায়, পুজোর আগেই ৬০ হাজার শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে। বিকাশ ভবনে এই ঘোষণার সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, নিয়োগ হবে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক মিলিয়ে।
সিঙ্গুরে বিজয়-বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার মধ্যেই টেট-ফয়সালায় সরকার স্বস্তি পেয়েছে বিলক্ষণ। মামলার পর মামলার জট কাটিয়ে অবশেষে শিক্ষক নিয়োগের রাস্তা খুলে যাওয়ায় তারা আর দেরি করতে নারাজ। এ দিন বিকাশ ভবনে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, ‘‘বহু পরীক্ষার্থী পাশ করে চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করতে হবে।’’ তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে ওই ৬০ হাজার শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। তবে সেটা হবে কয়েকটি ধাপে। লিখিত নিয়োগ পরীক্ষায় যাঁরা পাশ করেছেন, তাঁদের এর পরে বসতে হবে মৌখিক পরীক্ষায়। ‘‘সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপ্তিই জারি হবে পুজোর আগে,’’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন মন্ত্রী।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টিচার্স এলিজিবিটি টেস্ট বা টেট) নিয়ে মামলায় বুধবার রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এই সংক্রান্ত যাবতীয় স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিয়ে আদালত জানায়, নিয়োগে প্রশিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেই রায় ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পরেই প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক টেটের ফল ঘোষণা করে দেয় রাজ্য।
শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, গত ১১ অক্টোবর প্রাথমিকের টেটে পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০ লক্ষ এক হাজার ৩০১ জন। পাশ করেছেন এক লক্ষ ৪০ হাজার জন। ওই বছরের অগস্টে উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণি) শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার্থী ছিলেন চার লক্ষ ৯২ হাজার। কিন্তু কত জন পাশ করেছেন, জানাননি শিক্ষামন্ত্রী। পর্ষদের খবর, ওই স্তরের টেটে পাশের হার কমবেশি ৩০ শতাংশ। এই দুই পরীক্ষার সফল প্রার্থীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ হবে।
তবে উচ্চ প্রাথমিক টেটের ফল নিয়ে সরকার ধোঁয়াশা রাখায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। তার মধ্যে আছে: ২০১২ সালে উচ্চ প্রাথমিক টেটে যে-সব পরীক্ষার্থী পাশ করেছেন, তাঁরা নিয়োগের সময় কী ভাবে ডাক পাবেন? যাঁরা দু’বার পরীক্ষা দিয়েছেন এবং পাশও করেছেন, তাঁরাই বা ডাক পাবেন কী উপায়ে? কমিশন আর পর্ষদ সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, মৌখিক পরীক্ষার সময়েই প্রার্থীদের যাবতীয় নথিপত্র খতিয়ে দেখা হবে। তাতে গোলমাল দেখা গেলেই বাতিল হবে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়া।
প্রশিক্ষিত ও সাধারণ প্রার্থীদের পৃথক মেধা-তালিকা প্রকাশের দাবি তুলেছেন রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার। বিজেপি-র অভিযোগ, রায়ের পরেও সরকার ওই মেধা-তালিকা প্রকাশ করেনি। অসঙ্গতিপূর্ণ এমন তালিকা দিয়েছে, যাতে দুর্নীতির সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।