শুক্রবার পর্যন্ত ৭২ ঘন্টায় মোট ৬০ জন দন্তচিকিৎসক করোয়া আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যে।
সারা পশ্চিমবঙ্গে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্র মিলিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত ৭২ ঘন্টায় মোট ৬০ জন দন্তচিকিৎসক করোয়া আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কলকাতার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজেই অন্তত ২৫ জন। এর ফলে দন্ত চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে খানিকটা হলেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবস্থা যে দিকে যাচ্ছে, তাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে চিঠি লিখে আর আহমেদে পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করার কথা বলবেন বলেও ভাবছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
বৃহস্পতিবারই আর আহমেদে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন অধ্যক্ষ তপন গিরি-সহ ১১ জন শিক্ষক। বৃহস্পতিবারেই আক্রান্ত হয়েছিলেন লেডিজ হস্টেলের সুপার এবং রাজ্য ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি রাজু বিশ্বাসও। শুক্রবার সেখানে আক্রান্ত হলেন আরও আট জন স্বাস্থ্যকর্মী। বর্ধমান-সহ আরও কিছু ডেন্টাল কলেজ এবং বেসরকারি দন্ত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী হাসপাতালেও বহু দন্তচিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার পর্যন্ত সংখ্যাটা ৬০ ছুঁয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, আরও অনেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। পরীক্ষা করালেও তা ধরা পড়বে।
বাংলায় দ্রুত হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কয়েক দিনের ব্যবধানে অনেকটাই বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের আবহে বৃহস্পতিবার রাজ্যে দু’হাজার ছাড়িয়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রের চিকিৎসকদের চেয়ে দাঁতের চিকিৎসকরা আরও বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন।
রাজু বলেন, ‘‘একমাত্র দাঁতের রোগীদের ক্ষেত্রে রোগীর মাস্ক খুলে চিকিৎসা করতে হয়। এ ছাড়া উপায় নেই। মুখের ভিতরে পরীক্ষা করার জন্য মাস্ক খুলতেই হবে! দন্ত চিকিৎসকেরা যতই মাস্ক পরে থাকুন, রোগীরা তো মাস্ক পরছেন না। আমাদের ডেন্টাল কলেজে দিনে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার রোগী আসেন। এঁদের মধ্যে অনেক উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু সেটা তো আর চিকিৎসকের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়! ফলে না-জেনেই অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছি।’’
বৃহস্পতিবার আর আহমেদে যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের সংস্পর্শে আসা স্বাস্থ্যকর্মী ও পড়ুয়াদেরও কোভিড পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তাঁদেরই মধ্যে আট জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে শুক্রবার।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শুধু আর আহমেদেই গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৫ জন মতো আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে রাজু এবং হাসপাতালের সুপার তীর্থঙ্কর দেবনাথের দাবি, এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে পরিষেবা গুরুতর ভাবে ব্যাহত হবে না। চিকিৎসক আছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউ কোভিডে আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা না-করানো হলে বোঝা যাবে না।
তবে পাশাপাশিই রাজু জানাচ্ছেন, পরীক্ষা করালে অনেকেরই কোভিড ধরা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তেমন হলে তখন তাঁরা রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে সরকারি ভাবে চিঠি দিয়ে আর আহমেদে পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু আপাতত পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে না।