ক্রমশ সঙ্কট বাড়ছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। ফাইল চিত্র।
ক্রমশ সঙ্কট বাড়ছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। আরও এক স্বাস্থ্যকর্মীর কোভিড-১৯ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এল। ফলে হাসপাতালেই উঠতে শুরু করল আউটডোর আপাতত বন্ধ করে দেওয়ার দাবি। সরকারি হোক বা বেসরকারি, একের পর এক হাসপাতাল বা হাসপাতালের নানা বিভাগ যে ভাবে দরজা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে, তাতে চিকিৎসক এবং কর্মীর সংখ্যা কমিয়েও পরিষেবা সচল রাখতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আতঙ্ক যে ক্রমশ বাড়ছে, সে কথাও কামারহাটির হাসপাতালটির কর্তারা মানছেন।
সাগর দত্ত হাসপাতালের এক মাইক্রোবায়োলজি টেকনিশিয়ানের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা যাচ্ছিল কয়েক দিন ধরে। বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছে যে, তাঁর টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ। বছর ৫৫-র ওই ব্যক্তি সাগর দত্ত হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে চতুর্থ জন, যাঁর কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ এল। এর আগে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে রেডিয়োলজি এবং কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের দুই কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন ১৭ চিকিৎসক-সহ ৩৬ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠাতে হয়েছিল। হাসপাতালের দু’টি বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। কয়েক দিন আগে হাসপাতালের সেন্ট্রাল প্যাথলজি ল্যাবের এক টেকনিশিয়ান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর টেস্ট রিপোর্টও পজিটিভ আসে। বৃহস্পতিবার খবর এল এক মাইক্রোবায়োলজি টেকনিশিয়ানের আক্রান্ত হওয়ার।
সাগর দত্ত হাসপাতাল যে জেলায়, সেই উত্তর চব্বিশ পরগনা রেড জোনে রয়েছে। আর হাসপাতালটার অবস্থান যে এলাকায়, খোদ সেই কামারহাটিরই বেশ কিছুটা এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের মধ্যে রয়েছে। তাই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেরই দাবি, আউটডোর পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হোক। জ্বর বা শ্বাসকষ্টের উপসর্গ যাঁদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে, তাঁদের জন্য আলাদা আইসোলেটেড ক্লিনিক ইতিমধ্যেই খুলে ফেলেছে সাগর দত্ত হাসপাতাল। ওই বিভাগের আউটডোরে যে রোগীরা যাচ্ছেন, প্রয়োজন বুঝলে তাঁদের আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি করে নিয়ে লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগের আউটডোর আপাতত বন্ধ রাখা হোক, চিকিৎসকদের অনেকেই এমনটা চাইছেন বলে খবর। এলাকায় যে হেতু সংক্রমণ রয়েছে এবং হাসপাতালের ৪ কর্মী যে হেতু ইতিমধ্যেই আক্রান্ত, সে হেতু আর ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয় বলে তাঁদের মত।
হাসপাতাল সুপার পলাশ দাস অবশ্য আউটডোর এখনই পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতী নন। ইতিমধ্যেই ৪ কর্মীর মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়া যে উদ্বেগজনক, সে কথা হাসপাতাল সুপার মানছেন। তবে পরিস্থিতি এখন যে রকম, তাতে হাসপাতালগুলো খোলা থাকা জরুরি বলে তাঁর মত। পলাশ দাসের কথায়, ‘‘সতর্ক আমাদের তো থাকতেই হবে, নিজেদের নিরাপত্তার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। কারণ আমরা একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছি। কিন্তু আতঙ্ক ছড়ানোর ফলে হাসপাতাল চালু রাখতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কোথাও আমাদের হাসপাতালের কোনও কর্মীকে তাঁদের প্রতিবেশীরা চাপ দিচ্ছেন, হাসপাতালে গেলে আর পাড়ায় ফেরা যাবে না বলে শর্ত দিচ্ছেন। কখনও আবার কর্মীদের হাসপাতালে নিয়ে আসার বাসের চালক বলছেন, তিনি কাজে আসবেন না। কেউ কাজে না আসতে চাইলে সব ক্ষেত্রে জোর করতেও পারছি না।’’
আরও পড়ুন: বাঙালি বিজ্ঞানীদের তৈরি ৫০০ টাকার কিট, দ্রুত করোনা পরীক্ষায় সক্ষম
শুধু হাসপাতাল সুপার নন, সাগর দত্ত হাসপাতালের আরও একাধিক কর্তা এবং চিকিৎসক একই সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। ভিতরে-বাইরে আতঙ্কের সাঁড়াশি চাপে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। আউটডোর বন্ধ করে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রের খবর, কর্মীদের মধ্যে একে একে যে ভাবে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করছে, তাতে সতর্কতা মূলক বিধিনিষেধ আরও বাড়ানোর কথা ভাবতেই হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত সাড়া মিলছে না বলে বেশ কয়েক জন চিকিৎসকের অভিযোগ। ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কয়েক জন শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ মিলতে শুরু করেছে সাগর দত্ত হাসপাতালের অন্দরে।
আরও পড়ুন: কো-মর্বিডিটি তত্ত্ব কেন্দ্রেরও, বিরোধীদের কটাক্ষ তৃণমূলের
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)