দীর্ঘ আট মাস পরে করোনা আক্রান্ত হয়ে একই দিনে মৃত্যু হল তিন জনের। প্রতীকী ছবি।
দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেল দুশোর দোরগোড়ায়। দীর্ঘ আট মাস পরে করোনা আক্রান্ত হয়ে একই দিনে মৃত্যু হল তিন জনের। ছ’মাস পরে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও এক হাজারের ঘরে প্রবেশ করল। এটাই এখন বঙ্গের করোনা চিত্র!
গত এক সপ্তাহ আগে রাজ্যে দৈনিক করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা যা ছিল, এখন সংখ্যাটা দ্বিগুণের থেকেও বেশি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ১৪ এপ্রিল (১৫ এপ্রিল প্রকাশিত) রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ ২০ এপ্রিল (২১ এপ্রিল প্রকাশিত) সেখানে নতুন করে আক্রান্ত ১৯৯ জন। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজ্যে করোনার লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছিল। তেমনই, এত দিন ধরে বেশ কয়েক দিন অন্তর এক জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবর মিলছিল।
সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তিন অশীতিপরের মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের খবর, পাটুলির সুন্দরী ঘোষ (৯৩), খড়দহের আরতি দাস (৯২) ও দমদমের সুবীরকুমার কর (৮০)—এই তিন জনই কোভিড নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তিন জনই তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আনুষঙ্গিক অসুস্থতা ছিল। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, “এ জন্যই বারবার যতটা সম্ভব কোভিড বিধি মানতে বলা হচ্ছে। তাতে অন্তত বয়স্কদের ও আনুষঙ্গিক ঝুঁকি কমবে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ১৩-১৯ এপ্রিলের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলার পজ়িটিভিটি রেট অর্থাৎ সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গের পজ়িটিভিটি রেট ১৪.২৩%।
আবার, দেশের যে ১৫৪টি জেলাতে ১০ শতাংশের বেশি পজ়িটিভিটি রেট রয়েছে, তার মধ্যে বঙ্গের পাঁচটি জেলা—কালিম্পং (২৫.০%) কলকাতা (১৮.৯৮%), হাওড়া (১৪.৫২%), উত্তর ২৪ পরগনা (১২.৬৮%), নদিয়া (১০.১৪%) রয়েছে।
সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি রয়েছে হুগলি (৯.৭২%), পশ্চিম বর্ধমান (৯.৬৩%), মালদহ (৭.৬৯%), বীরভূম (৭.৬৪%), দার্জিলিং (৭.২৬%), বাঁকুড়া (৬.৫৮%), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৬.২৩%) জেলায়।
এক শতাংশের বেশি সংক্রমণের হার রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহারে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “রাজ্যে করোনা-শূন্য জেলার সংখ্যাও ক্রমশ কমছে। আগে ৬-৭টি থাকলেও, এখন তা কমে তিনটি হয়েছে।” ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর ও আলিপুরদুয়ার এখনও করোনা-শূন্য।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে এখন ১১২৭ জন অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫০ জন হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা অত্যন্ত কম হচ্ছে। সেই কারণেই পজ়িটিভিটি রেট বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম উপসর্গ দেখা গেলেই রোগীর করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।