বৃদ্ধার সঙ্গে তিন কন্যাশ্রী। —নিজস্ব চিত্র
ছেলে ও বৌমার হাতে মার খেয়ে এক বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ। জানতে পেরে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে নিয়ে গেল ‘কন্যাশ্রী’ তিন ছাত্রী। পুলিশের সহযোগিতায় বৃদ্ধার চিকিৎসাও করাল তারা।
এতদিন মূলত নাবালিকা বিয়ে রোখার ক্ষেত্রে কন্যাশ্রীদের ভূমিকা প্রকাশ্যে আসত। শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ৩ ব্লকের কিয়াবনির করমশোলে দেখা গেল ভিন্ন ছবি। তিন ছাত্রীই পড়ে স্থানীয় কিয়াবনি হাইস্কুলের দশম শ্রেণিতে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, করমশোল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ঊষা মণ্ডল ছেলের বাড়িতে থাকতেন। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ছেলে শ্যাম মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী ঊষার উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালান। অসুস্থ হয়ে পড়েন ঊষা। খবর পেয়ে এ দিন সকালে করমশোলেরই তিন ছাত্রী হাসি মণ্ডল, অরুণিমা সর্দার ও তানিশা মণ্ডল বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে সেবা শুশ্রূষা করে। পরে তারা ঊষাকে চন্দ্রকোনা রোড বিট হাউসের পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। পুলিশ বৃদ্ধার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পুলিশের সহযোগিতায় ঊষাকে স্থানীয় দ্বারিগেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় হাসি, অরুণিমা, তানিশা। পরে করমশোল গ্রামে গিয়ে পুলিশ শ্যাম ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে। যদিও ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি ঊষা। আর অভিযোগ উড়িয়ে শ্যাম বলেন, ‘‘যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।’’
আরও পড়ুন: সংবিধান মেনেই বক্তৃতা রাজ্যপালের, অর্থ বিল পেশেও সম্মতি
তিন ছাত্রীই একসঙ্গে স্কুলে যায়। তিনজনই কন্যাশ্রী। অরুণিমা পুলিশকর্মীর মেয়ে। হাসির বাবা কৃষক, তানিশার বাবা রাজমিস্ত্রি। স্কুলে তাদের বাল্যবিবাহ রোধ, বয়স্ক, বয়স্কাদের নির্যাতন রোধ-সহ সামাজিক সচেতনতা বিষয়ে নিয়মিত পাঠ দেওয়া হয়। তিন ছাত্রী বলছে, ‘‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করার শিক্ষা আমরা স্কুল থেকে, পরিবার থেকে পাই। চোখের সামনে অন্যায় দেখে চুপ থাকতে পারিনি।’’
কিয়াবনি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর ছাত্রীদের নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘‘দশম শ্রেণির তিন কন্যাশ্রী ছাত্রী যা করেছে তার জন্য স্কুল আজ গর্বিত।’’ আর বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী বলছেন, ‘‘কন্যাশ্রীপ্রাপ্ত মেয়েরাও যে সচেতন হচ্ছে
এটা তারই প্রমাণ।’’