Rail Projects

বাংলা ‘বঞ্চিত’ রেলে, কেন্দ্রের যুক্তি সেই জমি

বাংলার প্রতি মোদী সরকারের এই বিমাতাসুলভ আচরণ নিয়ে রেল বাজেট নিয়ে সংসদের বিতর্কে সরব হন তৃণমূলের সৌগত রায়।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০২:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

রোগ পুরনো! জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যা। যে কারণে থমকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে রেলের ২৮টি প্রকল্প। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল অবশ্য বলছেন, জমি পেলেই দ্রুত কাজ এগোবে। সেই আশ্বাসে আদো ভরসা রাখতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, রেলের হাতে টাকা নেই। তাই জমির যুক্তি দেখাচ্ছে। এটা বাংলাকে বঞ্চিত করার মোদী সরকারের কৌশল মাত্র। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে ৫৪টি রেল প্রকল্প চালু রয়েছে। রেল জানিয়েছে, অন্তত ২১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকার ২৮টি প্রকল্প (যার মধ্যে রয়েছে ২৮৭৫ কিলোমিটার লাইনের কাজ) জমির অভাবে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে রেল। রেল জানিয়েছে, জমি পেলে ফের কাজ শুরু হবে।

Advertisement

বাংলার প্রতি মোদী সরকারের এই বিমাতাসুলভ আচরণ নিয়ে রেল বাজেট নিয়ে সংসদের বিতর্কে সরব হন তৃণমূলের সৌগত রায়। বাংলার রেল প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, বিশেষ করে দমদমকে কেন্দ্র করে বারাসত, দক্ষিণেশ্বর, বারাকপুর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণ প্রকল্পে অস্বাভাবিক কম অর্থ দেওয়া নিয়ে সরব হন তিনি। দমদমের সাংসদ বলেন, ‘‘অর্থের অভাবে প্রকল্পগুলি চলছে তো চলছেই।’’ শিয়ালদহ-হাওড়া লাইনের লোকাল ট্রেনের সঙ্গে মুম্বইয়ের তুলনা টেনে সৌগত বলেন, ‘‘রেলমন্ত্রীর শহরের ট্রেন দেশের সেরা পরিবহণ ব্যবস্থার প্রতীক। শিয়ালদহ-হাওড়া লাইনের ট্রেনে উঠলে ভাববেন, কী ভাবে মানুষ এতে যাতায়াত করে! মেট্রোরও কোনও আধুনিকীকরণ হচ্ছে না।’’ তৃণমূলের আবু তাহির খানের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ জেলায় দশ বছর ধরে তৈরি হয়ে পড়ে আছে নাসিপুর রেল ব্রিজ। ‘অ্যাপ্রোচ’ রাস্তার অভাবে ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।

জবাবি বক্তব্যে রেলমন্ত্রী বাংলা তথা তৃণমূলের সাংসদদের তোলা প্রশ্ন বা অভিযোগগুলির মোকাবিলা শুরুই করেন জমি প্রসঙ্গ দিয়ে। বলেন, ‘‘রেলের লাইন শূন্যে হতে পারে না। রেল জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না। রাজ্যকেই তা করে দিতে হবে। জমি না পেলে কাজ হবে কী করে! হাতের একটি ফাইল তুলে পীযূষ বলেন, ‘‘বহু প্রকল্প গত ৩০-৪০ বছর ধরে চালু রয়েছে। খরচ ৫ গুণ বেড়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

বঙ্গের রেলচিত্র

• রাজ্যের মোট প্রকল্প-৫৪টি। এর মধ্যে ১৬টি নতুন লাইন, ৪টি গেজ
পরিবর্তন এবং ৩৪টি ডাবলিং প্রকল্প। মোট খরচ ৪৩,০৩৩ কোটি।

• পশ্চিমবঙ্গ সরকার জমি না-দেওয়ায় আটকে রয়েছে ২৮টি প্রকল্পের ২৮৭৫ কিলোমিটার লাইনের কাজ। প্রকল্প-মূল্য ২১,১৪৮ কোটি।

জমি না-পাওয়ায় আটকে
রয়েছে যে-সব বড় প্রকল্প

নতুন লাইন

১৩টি প্রকল্প। ১০৪৯ কিমি। মূল্য ৯২২৫ কোটি

• বরগাছিয়া-চাঁপাডাঙা, ৩২ কিমি

• চাঁপাডাঙা-তারকেশ্বর,৮ কিমি

• আমতা-বাগনান, ১৬ কিমি

• জঙ্গিপাড়া-ফুরফুরা শরিফ, ১২ কিমি।

• লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা লাইন তৈরি, মূল প্রকল্পের অন্তর্গত নামখানা থেকে চন্দ্রনগর ১৩.৫ কিমি, কাকদ্বীপ থেকে বুদাখালি ৫ কিমি, চন্দ্রনগর থেকে বকখালি ১৭ কিমি লাইনের কাজ জমির অভাবে বন্ধ

গেজ পরিবর্তন

৪টি প্রকল্প। ১২০০ কিমি। খরচ ৬৬৫৬ কোটি

• নিউ জলপাইগুড়ি-নিউ বঙ্গাইগাঁও প্রকল্প- ৩৫ কিলোমিটার।

ডাবলিং

১১টি প্রকল্প। ৬২৬ কিমি। খরচ ৫২৬৭ কোটি

• নিউ আলিপুর-আক্রা প্রকল্পের আওতায় তিনটি নতুন লাইন। মোট দৈর্ঘ্য ৩১ কিমি।

(জমির অভাবে অস্বাভাবিক দেরি হওয়ায় এই প্রকল্পগুলির কাজ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আপাতত বন্ধ রেখেছে রেল)

রেল মন্ত্রকও জানাচ্ছে, গত এক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গে জমি পেতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। এক রেল-কর্তার বক্তব্য, জমি অধিগ্রহণের প্রশ্ন উঠলেই রাজ্য প্রশাসন চূড়ান্ত অসহযোগী মনোভাব দেখাতে শুরু করে। ফল ভুগছে রাজ্যবাসী। নতুন প্রকল্প তো দূর, ঘোষিত প্রকল্পও স্থগিত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে টাকার অভাবে বাতিলও হতে পারে।’’ বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারও দাবি করেন, ‘‘রেলমন্ত্রীর দাবি জমি দিলেই কাজ দ্বিগুণ গতিতে এগোবে। রাজ্যের উচিত রেলের প্রকল্পের জন্য দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়া।’’ তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘দল নীতিগত ভাবে বলপূর্বক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে। কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাজারদর থেকে বেশি দামে জমি কিনতে হবে রেলকে। আসলে রেলের হাতে টাকা নেই।’’

ঘনিষ্ঠ মহলে পীযূষ একাধিক বার বলেছেন, জমি জট কাটাতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীদের এগিয়ে আসা উচিত। তাই গত বছর জমি অধিগ্রহণে ইতিবাচক হস্তক্ষেপ চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেন পীযূষ। আজ সে প্রসঙ্গও তোলেন রেলমন্ত্রী। বলেন, ‘‘যে রাজ্যে প্রকল্পের পুরো জমি মিলবে সেখানে দ্রুত কাজ শেষ করতে রেল বদ্ধপরিকর। যেমনটি হয়েছে ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ প্রকল্পে। পাহাড়ি রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও ১২৫ কিমির মধ্যে ১০৫ কিমির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী রেলমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ প্রকল্পের মাত্র ৪৬৬ মিটার কাজ বাকি রয়েছে। তা দ্রুত শেষ করা হোক। জবাবে তৃণমূলকে বিঁধে সৌগতের দিকে তাকিয়ে গয়াল বলেন, ‘‘দাদা আপনি এখানে বসে রয়েছেন। কাজ শেষ করতে যে সাড়ে সাত একর জমি প্রয়োজন, তা জোগাড় করে দিলেই কংগ্রেসের এত ‘বড়’ নেতার রেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা যেত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement