রাজ্যে জমি জটে থমকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ। নিখরচায় জমি পেয়েও রাজনৈতিক টানাপোড়েনে চার বছর ধরে আটকে ক্যানিং মহকুমায় দমকল কেন্দ্র তৈরি।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ক্যানিং মহকুমায় দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য ঘটা করে শিলান্যাস হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর কলতলা মোড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন সর্দার জনস্বার্থে নিজের দু’বিঘা জমি দান করেছিলেন। কিন্তু সেই কাজ আজও শুরু হয়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঁচটি মহকুমা ক্যানিং, বারুইপুর, আলিপুর, ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ। জেলার অন্যন্য মহকুমায় দমকল কেন্দ্র থাকলেও ক্যানিংয়ে এখনও নেই। আগুন নেভানোর জন্য বারুইপুর থেকে দমকলের গাড়ি আনতে হয়। দূরত্বের কারণে দমকলের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
দীর্ঘ দিনের এই সমস্যার কথা ভেবেই ক্যানিং মহকুমায় একটি দমকল কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় আগের বাম সরকার। সেই মতো জমি খোঁজার কাজও শুরু হয়। মহকুমা শহরের বুকে কোনও জমি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় নিজের জমি দান করেছিলেন আলাউদ্দিন। ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য ওই জমিতে শিলান্যাস করেন তদানীন্তন দমকলমন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যে পালা বদলের পরে সেই কাজ আর শুরু হয়নি।
বাম আমলে না হওয়া কাজ এই সরকারের আমলে হবে বলে আশা করেছিলেন ক্যানিংবাসী। বিগত বাম সরকারের আমলে শিলান্যাস ছাড়া আর কিছুই হয়নি। অভিযোগ, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিগত সরকারের প্রস্তাবিত জমিতে ওই কাজ করা যাবে না বলে বাতিল করে দেয়। সরকারের দাবি, দমকলকেন্দ্র তৈরির জন্য চিহ্নিত বাসন্তীর কলতলা মোড়ের জমি শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে দূরে।
জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি শৈবাল লাহিড়ি বলেন, “মহকুমা শহরের বুকে ক্যানিংয়ের হেলিকপ্টার মোড়ের কাছে দু’বিঘা জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্র তৈরির জন্য দমকল দফতর ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পূর্ত দফতরকে ওই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ৮০ লক্ষ টাকার অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। আশা করছি পুজোর পর কাজ শুরু হবে।”
মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য কোনও সরকারি নির্দেশিকা হাতে পাইনি। তাই ওই প্রকল্প কোন পর্যায়ে রয়েছে বলতে পারব না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ ইঞ্জিনিয়ার অসিত দত্ত বলেন, “ক্যানিংয়ে একটি দমকলকেন্দ্র তৈরির দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে। তবে ওই দমকলকেন্দ্র তৈরির জন্য আমরা তিন বার টেন্ডার করেছিলাম। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। আবার নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে।”
বাসন্তীর কলতলার যে জমিতে দমকলকেন্দ্র তৈরির কথা ছিল, বর্তমানে সেই জমিতে রাস্তার কাজের জন্য বিভিন্ন ঠিকাদারি সংস্থা প্রয়োজনীয় মালপত্র ফেলে রেখেছে। জমিদাতা আলাউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, “মানুষের উপকারের জন্য স্বেচ্ছায় দু’বিঘা জমি দিয়েছিলাম। অথচ সেই জমিতে সরকার কোনো কাজই করল না। উল্টে জমিটাই চলে গেল।”
প্রাক্তন সেচমন্ত্রী তথা বাসন্তীর বর্তমান বিধায়ক সুভাষ নস্কর বলেন, “আমাদের সময়ে ক্যানিংয়ে দমকলকেন্দ্র তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেই সময় ক্যানিং-১ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতি আমাদের জমি দিতে অস্বীকার করে। বাসন্তীর কলতলার মানুষ স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ায় ওইখানে দমকল কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই জমি মহকুমা শহরের কাছেই ছিল।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আমি বাসন্তীর বিধায়ক হওয়ায় তৃণমূল রাজনীতি করতে আমাদের প্রস্তাবিত এলাকায় দমকল কেন্দ্রের কাজ করতে দেয়নি। ওরা মানুষের প্রয়োজন ভুলে রাজনীতি করতে গিয়ে এতো দিনেও দমকলকেন্দ্রের কাজ শুরু করে উঠতে পারল না।”