ছবি: সংগৃহীত।
লকডাউনের পরে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছেন গ্রামে। গত ছ’মাসের বেশি সময় ধরে কোনও রোজগার নেই। আনাড়ি হাতে, অনভিজ্ঞ সেই যুবকের দল পেটের দায়ে সুন্দরবনের খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের শিকার হচ্ছেন।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা তাপস দাস বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এই যুবকদের বিকল্প রোজগারের পথ খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম থেকে যুবকদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, মাছ বা কাঁকড়া ধরা ছাড়া তাঁরা আর কী ধরনের কাজ করতে আগ্রহী। তাপসবাবু বলেন, ‘‘হয় তো কেউ মোবাইল সারাতে পারদর্শী, কেউ স্থানীয় গাইডের কাজ করতে পারেন। এঁদের কাছ থেকে সেই ইচ্ছের কথা জানার পরে বিকল্প কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাব।’’ বন দফতরের আশা, বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা হলে এই যুবকের দল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর জঙ্গলে যাবেন না। বাঘের সঙ্গে মানুষের সংঘাতও কম ঘটবে।
বন দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত এপ্রিল মাস থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ছ’মাসের মধ্যে বাঘের পেটে গিয়েছেন ১২ জন যুবক। এত কম সময়ের মধ্যে এত বেশি ঘটনা সাধারণত ঘটে না। মৃত এই যুবকদের মধ্যে বেশ কয়েক জন পরিযায়ী শ্রমিক বলেও জানা গিয়েছে।
তাপসবাবু জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় মাছ ধরার জন্য লাইসেন্স রয়েছে ৫০০ নৌকোর। কিন্তু, বাস্তবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার প্রায় তিনগুণ। জঙ্গল লাগোয়া ছোট খাঁড়িতে ঢুকে তাঁরা কাকঁড়া ধরতে যাচ্ছেন।
যে নৌকো নিয়ে মানুষকে খাঁড়িতে ঢুকতে দেখছে, বাঘ সন্তর্পণে খাঁড়ির ধার ধরে সেটির পিছু নিচ্ছে। তাপসবাবু বলেন, ‘‘এঁরা যদি নদীতেই থেকে যান, তা হলে সমস্যা হয় না। কিন্তু নদীর পাড়ে কাঁকড়া বেশি থাকে। কখনও সেই কাঁকড়া ধরতে, কখনও রান্না করতে তাঁরা পাড়ে নেমে পড়ছেন। বাঘ সেই সুযোগটা নিচ্ছে।’’ যাঁদের নৌকোর লাইসেন্স রয়েছে, বাঘের আক্রমণে তাঁদের মৃত্যু হলে, তাঁদের পরিবার চার লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না।
বুধবার কুমিরমারি, কালীতলা, হেমনগর, সাতজেলিয়া-সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু গ্রামের প্রধান ও কর্মাধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক করেন তাপসবাবু। তিনি জানিয়েছেন, বাঘের আক্রমণে জেরবার মানুষ ক্ষুব্ধ। তাপসবাবু বলেন, ‘‘গ্রামে ফিরে গিয়ে জেলেদের সতর্ক করার জন্য বলা হয়েছে। খাঁড়িতে ঢুকলেও পাড়ে না যেতে বলা হয়েছে। আমাদের নজরদারি বোটের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়েছে। গ্রামে লিফলেটও ছড়ানো হবে। কিন্তু এই মানুষগুলোর বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করা বেশি প্রয়োজন।’’
মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীদের এই সংঘাত কমাতে সুন্দরবন এলাকায় কাজ করে একটি সংগঠন। সেটির কর্তা জয়দীপ কুণ্ডুর কথায়, ‘‘লকডাউনের পরে বাড়ি ফিরে এসেই আমপানের মুখে পড়ে যান এই শ্রমিকের দল। চাষের জমিতে, পুকুরে নোনা জল ঢুকে যায়। যাঁরা চাষ করে বা মাছ ধরে খেতে পাবেন ভেবেছিলেন, তাঁরা সমস্যায় পড়ে যান। আমরা নোনা মাটিতে ফলনশীল ধানের বীজ দিয়েছি। জৈব সার দিয়েছি। নোনা জল ঢুকে পড়া পুকুর পরিষ্কার করিয়েছি। এমনকী, যাঁরা নৌকো নিয়ে মাঝ ধরতে যান, তাঁদের রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডারও দেওয়া হয়েছে, যাতে জ্বালানির জন্য তাঁদের পাড়ে নামতে না হয়। কিছু মানুষের লাভ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিকল্প রোজগারের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সুন্দরবনে এই ধরনের সাহায্যের জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।’’